কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
ঘুরপথে নিয়োগপত্রের দরুন কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে কিছু স্কুলশিক্ষকের চাকরি যাওয়ায় রাজ্য সরকার যে-চাপের মুখে পড়েছে, তার উল্টো চাপ এ বার উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এনবিএসটিসি-তে। সেখানে চাপ কাজ ফিরিয়ে দেওয়ার।
বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার অধীনে ওই নিগমের হয়ে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছিলেন ৩৫ জন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কিছু পরে কোনও কারণ না-দেখিয়ে তাঁদের বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে শ্রমিকদের পক্ষে রায় দিয়েছে হাই কোর্টের বিচারপতি টিএস শিবাঘ্ননম ও বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চ। সিঙ্গল বেঞ্চ এবং শিল্প ট্রাইবুনালের রায় অপরিবর্তিত রেখে তারা জানিয়েছে, নিগম ওই শ্রমিকদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। ঠিকা কর্মীদের নিগমের নিযুক্ত কর্মী হিসাবে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল শিল্প ট্রাইবুনাল।
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, ১৪টি সংস্থার মাধ্যমে ওই সব কর্মী নিগমের বিভিন্ন ডিপোয় ২০ বছর ধরে কাজ করছিলেন। সরকারি পরিবহণ নিগমের নিয়মিত কর্মীরা যে-সব কাজ করেন, তার অনেক কিছুই চুক্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের দিয়ে করানো হত। ঠিকা কর্মীদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেয় নিগম। নামমাত্র বেতনে তাঁদের কাজ করানো হচ্ছে জেনে ২০১০ সালে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেয় অর্থ দফতর। পরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঠিকাদার সংস্থাগুলির বেশির ভাগই অবৈধ। ২০১১-র জানুয়ারিতে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডিবি লেপচার সভাপতিত্বে বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, সংস্থাকে না-জানিয়ে ঠিকাদার সংস্থা কাউকে ছাঁটাই করতে পারবে না। কারও ক্ষেত্রে তেমন ঘটলে সেই কর্মী নিগমের অধীনে থেকে অন্য ঠিকাদার সংস্থার আওতায় না-আসা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন।
২০১২-র ১৬ ফেব্রুয়ারি নিগম নির্দেশ জারি করে ওই কর্মীদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়। শিল্প ট্রাইবুনালে মামলা করেন কর্মীরা। অভিযোগ, প্রায় দু’বছর মামলা চলাকালীন বার বার তলব সত্ত্বেও নিগমের কেউ হাজিরা দেননি। ২০১৪-র জুলাইয়ে ট্রাইবুনাল ওই কর্মীদের পক্ষে রায় দেয়, নিগম ওঁদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। রায়ের বিরোধিতা করে হাই কোর্টে আবেদন জানায় নিগম। শিল্প ট্রাইবুনালের রায় বহাল রাখে সিঙ্গল বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেন নিগম-কর্তৃপক্ষ।
ঠিকা কর্মীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের সহযোগী আইনজীবী বাণীব্রত রায় বলেন, ‘‘নিগম-কর্তৃপক্ষ ট্রাইবুনালে ইচ্ছাকৃত ভাবে হাজিরা দেননি। রায়দানের ক্ষেত্রে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা এই বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।’’
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে ‘সংগ্রামী শ্রমিক ঐক্য’ ওই ঠিকা কর্মীদের পাশে ছিল। ওই সংগঠনের সম্পাদিকা বর্ণালী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রায় ঐতিহাসিক।’’ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সমীরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘রায়ের প্রতিলিপি পেয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’