মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সদ্য সিঙ্গুর সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি জানান, কলকাতায় ধর্নায় বসার আগে তিনি সিঙ্গুর ঘুরে গেলেন। বাম জমানায় তৃণমূলের জমি আন্দোলনে সিঙ্গুরের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হত নন্দীগ্রামের নাম। আগামী সোমবার যে চার দিনের পূর্ব মেদিনীপুর সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে কিন্তু তাঁর সূচিতে এখনও পর্যন্ত নন্দীগ্রাম নেই। যদিও তার থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে খেজুরিতে তিনি প্রশাসনিক সভা করবেন। ফলে গুঞ্জন উঠেছে তৃণমূলে। বিঁধছেন বিরোধীরাও।
পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে হেরে যাওয়ার পরে আর সেই এলাকায় যাননি মুখ্যমন্ত্রী। অথচ তার পরে দু’বার পূর্ব মেদিনীপুরে এসেছেন তিনি। তাঁর জেলা সফর শুরু হচ্ছে সোমবার, ৩ এপ্রিল। ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী খেজুরিতে প্রশাসনিক জনসভা করবেন বলে ঠিক রয়েছে। ৪ এপ্রিল দিঘায় বুথ কর্মীদের নিয়ে দলীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। ৫ তারিখ দিঘায় কাটিয়ে ৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফিরবেন।
খেজুরির ঠাকুরনগরে যে মাঠে প্রশাসনিক সভা হবে, সেখান থেকে নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ার দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। গত বিধানসভা ভোটের প্রচারে বেরিয়ে এখানেই পায়ে চোট পেয়েছিলেন মমতা। শনিবার সেখানকার দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক জন তৃণমূল কর্মী বললেন, ‘‘গত বছর সেপ্টেম্বরে জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী তমলুকে সভা করেছিলেন। তার আগে দিঘায় এসেছিলেন। আবারও তিনি জেলায় আসছেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পর থেকে আর নন্দীগ্রামে আসছেন না।’’
নন্দীগ্রামের তৃণমূল কর্মীদের একাংশ কিন্তু মনে করেন, হারা তালুকে বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। তাই মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে যদি তাঁর লড়াইয়ের এই পুরনো মাটিতে জনসংযোগ করতেন, তাতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের লাভই হত। শুভেন্দুর বিজেপি যাত্রার পরে নন্দীগ্রামে তৃণমূল ভেঙেছে। গত বিধানসভা ভোটের পরে তৃণমূলের সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে সংখ্যালঘু নেতাদের গুরুত্ব কমেছে। ডানা ছাঁটা হয়েছে জমি আন্দোলন পর্বের নেতা শেখ সুফিয়ানের ঘনিষ্ঠদের। তমলুক সাংগঠনিক জেলা কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান পীযূষ ভুঁইয়ার শিবিরের সঙ্গে সুফিয়ানের শিবিরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুফিয়ানের অবশ্য দাবি, ‘‘পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। নন্দীগ্রামে অনেকেই বিজেপি ছেড়ে আমাদের সঙ্গে আসছেন। এখন যদি নেত্রী নিজে এখানে আসতেন, তা হলে তো কথাই ছিল না।’’
তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘হারের পরে নন্দীগ্রামে যাওয়ার মুখ নেই মমতার।’’ তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পীযূষ পাল্টা আশাবাদী, ‘‘পরে জেলায় এলে তিনি নিশ্চিত নন্দীগ্রামে যাবেন।’’