এই দেওয়াল থেকেই খোলা হয়েছে পার্থের নামফলক ও ছবি। নিজস্ব চিত্র
শিক্ষা-দুর্নীতিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে গ্রেফতারের পরে একে একে সব খুইয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের যাবতীয় পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে তাঁকে। হারিয়েছেন সব দফতরের মন্ত্রিত্ব। নবান্নে তাঁর ঘরের দেওয়াল থেকে রাতারাতি সরেছে নামফলক।
সব মহলই এখন পার্থের সংস্রব ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত। এই আবহেই পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের নিহত তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের বিএড কলেজ থেকেও পার্থের নাম দেওয়া উদ্বোধনের ফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে খবর। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। তবে কলেজে গিয়ে দেখা গিয়েছে, মূল ভবনে ঢোকার মুখে দেওয়াল থেকে খুলে ফেলা হয়েছে নামফলক। সেই উদ্বোধনের ফলকে পার্থের নাম ছাড়াওপ্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ছবি ছিল বলে সূত্রের খবর।
নান্টু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেই দাবি। এবং সেই সূত্রে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে অনেককে শিক্ষকতা-সহ নানা সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। যাঁদের চাকরি দিতে পারেননি, ছেলের মৃত্যুর পরে নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধান তাঁদের টাকা ফিরিয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। চাঁদহরির দাবি, সেই টাকার অঙ্ক প্রায় ১৫ কোটি।
রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১২ সালে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা নান্টু প্রথম প্রাথমিক শিক্ষক পদে প্রায় ৬০ জনকে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি। এরপরই দেড়েদিঘিতে কেলেঘাই নদীর তীরে প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে মায়ের নামে প্রাসাদোপম বিএড কলেজ গড়েন তিনি। সেই ‘আশালতা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ ২০১৬ সালে পার্থ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সরকারি অনুমোদন পায়। কলেজ উদ্বোধনে আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে আসতে পারেননি পার্থ। তবে উদ্বোধক হিসেবে ফলকে তাঁর নাম রয়ে যায়। পাথরের সেই ফলক লাগানো হয় কলেজের দেওয়ালে। পরে দু’টি ফলকের মাঝে নাম-সহ পার্থের ছবিও বসানো হয়।
২০১৮ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি ভেড়ি নিয়ে জনরোষে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নান্টু নিজেই কলেজ পরিচালনা করতেন। তারপরে নান্টুর দাদুর নামাঙ্কিত পাঁচ সদস্যের ‘আশুতোষ প্রধান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ কলেজ পরিচালনা করছে। সভাপতি পদে রয়েছেন চাঁদহরি। তবে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তিনি আর বিশেষ হাঁটাচলা করতে পারেন না। পার্থের ছবি ও নামফলক সরানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘আমি এখন কলেজে যেতে পারি না। একটা ফলক ছিল। সরিয়েছে কিনা বলতে পারব না।’’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের শিক্ষক ও কর্মীরা অবশ্য মানছেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ছবি ও ফলক সরানো হয়েছে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘এক সপ্তাহ আগেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত ফলক ও ছবি দেওয়ালে ছিল। তারপর কোথায় গেল জানা নেই।’’