Bogtui

Bogtui: ঠিক খবর পান মমতা, পদ্মের ‘সত্যান্বেষীদের’ রিপোর্টে চার বার রয়েছে অনুব্রতের নাম

বিজেপি-র সত্যান্বেষী দলের রিপোর্টে অনুব্রত মণ্ডলের নাম থাকার যে দাবি মমতা করেছিলেন, তা ঠিক। প্রশ্ন রয়েছে ফিরহাদ হাকিমের বগটুই যাওয়া নিয়েও।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ১৪:১৮
Share:

বগটুই অগ্নিকাণ্ডে অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ যোগের অভিযোগ।

বগটুইয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল শর্ট সার্কিটে টিভি বিস্ফোরণ ঘটে দুর্ঘটনার দাবি করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি সরাসরিই বলেছিলেন, টিভি ফেটে আগুন লেগেছে। সেই বিবৃতিই রামপুরহাটের ঘটনায় অনুব্রতের ‘ঘনিষ্ঠ’ যোগের প্রমাণ বলে দাবি বিজেপি-র।

Advertisement

বগটুই এবং রামপুরহাট ঘুরে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে বুধবার যে রিপোর্ট বিজেপি-র ‘সত্যান্বেষী’ কমিটি জমা দিয়েছে তাতে বারেবারে এসেছে অনুব্রতর নাম। বুধবার রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, রিপোর্টে নাম রয়েছে অনুব্রতের। একই সঙ্গে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘তার মানে ওরা ওকে গ্রেফতার করতে চায়!’’

রিপোর্টে অনুব্রতর নাম থাকার যে দাবি মমতা করেছিলেন, তা যে ঠিক, তা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে। আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২৩ পাতার রিপোর্টের শেষ পাঁচটি পাতায় মোট চারবার রয়েছে অনুব্রতের নাম। সেখানে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, বগটুই গণহত্যায় অনুব্রতর যুক্ত থাকাটা একরকম নিশ্চিত। মুখ্যমন্ত্রী বগটুই যাওয়ার পরে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা না বলে অনুব্রতর সঙ্গে কেন আলোচনা করেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, অনুব্রতর সঙ্গে আলোচনার পরেই অভিযুক্ত আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ‘মামলা সাজানো’ সংক্রান্ত বক্তব্য উল্লেখ করেও ওই রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রী ও অনুব্রতর নিন্দা করা হয়েছে।

Advertisement

বগটুইয়ের গণহত্যার পরে প্রথমে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের না পাঠিয়ে কেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ঘটনাস্থলে পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিজেপি-র রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ঘটনার পরেই পরেই যেখানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা কিংবা রাজ্য পুলিশের ডিজি-র যাওয়া উচিত ছিল সেখানে বগটুইয়ে যান ফিরহাদ এবং রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যেহেতু বগটুইয়ে আক্রান্তরা সংখ্যালঘু শ্রেণির, তাই সেই সম্প্রদায়ের নেতাকেই পাঠানো হয় ঘটনা ধামাচাপা দিতে।

তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, দলীয় সমীকরণে ফিরহাদ বীরভূম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই ঘটনা ঘটার পর মমতা তাঁকেই প্রথমে সেখানে পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়গত রাজনীতির নেই।

বগটুইয়ের ঘটনা জানার পরেই রাজ্য বিজেপি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছিল। গত ২২ মার্চ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডা পাঁচ সদস্যের একটি সত্যান্বেষী কমিটি তৈরি করে দেন। সেই কমিটিতে সুকান্তের পাশাপাশি ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা তথা আইপিএস ভারতী ঘোষ। উল্লেখযোগ্য ভাবে দলের বাকি তিন সদস্যও ছিলেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন ডিজিপি তথা রাজ্যসভার সাংসদ ব্রজলাল, মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা সাংসদ সত্যপাল সিংহ এবং কর্নাটকের প্রাক্তন আইজি কে সি রামমূর্তি।

২৩ মার্চ রাতে কলকাতায় পৌঁছন তিন সাংসদকে নিয়ে পর দিন বগটুই যান সুকান্ত, ভারতীরা। বুধবার দিল্লিতে নড্ডার বাসভবনে গিয়ে কমিটির পাঁচ সদস্য সেই রিপোর্ট জমা দেন। সেখানেও বারংবার কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই রিপোর্টে সুকান্তরা চেয়েছেন, ভাদু শেখের খুনের মামলাও সিবিআই তদন্ত করুক। কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা একই সঙ্গে ভাদু খুন এবং বগটুই গণহত্যার তদন্ত করুক।

শুধু এটুকুই নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বিজেপি-র প্রতিনিধি দল এমন দাবিও করেছে যে, আলাদা করে বগটুই নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলা চালানো হোক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন এবং শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনও যাতে উদ্যোগী হয় এবং বগটুইয়ে যায়, সে দাবিও জানানো হয়েছে রিপোর্টে।

বগটুই-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। বুধবার নড্ডাকে জমা দেওয়া রিপোর্টেও সে কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, গোটা ঘটনাই হয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বখরা নিয়ে গোলমালের কারণে। পুলিশ তাদের ‘দায়িত্ব: পালন করেনি বলে অভিযোগ তোলার পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা হয়েছে, মৃতদের ডিএনএ পরীক্ষার আগেই সৎকার হয়ে যাওয়া নিয়ে। সব মিলিয়ে গোটা রিপোর্টেই রাজ্যে আইনের শাসন নেই বলে দাবি করে তৃণমূল-শাসিত বাংলায় ‘মাফিয়ারাজ’ চলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement