নয়-নয় করে হাজার চারেক রিকশা চলছে এই শহরে। আশপাশের এলাকাগুলো ধরলে আরও তিন হাজার। অথচ, নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগরে রিকশা স্ট্যান্ড নেই অধিকাংশ জায়গাতেই। ফলে রাস্তার ধারে জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশা। শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তা আরও সরু হচ্ছে দিন দিন। আর রাস্তায় এভাবে রিকশা দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে অটো কিংবা ম্যাজিক গাড়ির চালকদের সঙ্গে রিকশা চালকদের বিবাদ এখন প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। কখনও তা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়াচ্ছে। পুরসভার যে ক’টা রিকশা স্ট্যান্ড আছে, সেগুলিও ক্রমশ নানা ভাবে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। খোলা আকাশে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে শহরের অন্যতম যানবাহনটিকে।
কৃষ্ণনগর স্টেশন চত্বরে কোনও রিকশা স্ট্যান্ডই নেই। কিছু রিকশা স্টেশনের মূল গেটের সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলেও সিংহভাগই এদিক-ওদিক রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে নিমতলা-খেজুরতলা গেট এলাকায় রাস্তার উপরে পরপর রিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট হয়। যার জেরে নিত্য হয়রানি হয় লোকজনের। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুরসভার একটি স্থায়ী স্ট্যান্ড থাকলেও সেটা ক্রমশ নানা ভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা পোস্ট অফিস মোড় থেকে শুরু করে সদর মোড় এলাকায়।
নদিয়া জেলা রিকশা ও ভ্যান চালক ইউনিয়নের জোনাল সম্পাদক অভিজিৎ ফনী বলেন, ‘‘বহু জায়গায় কোনও স্থায়ী রিকশা স্ট্যান্ড নেই। আবার যে সব এলাকায় স্থায়ী স্ট্যান্ড আছে, সেগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। দোকানের সামনে দাঁড়ালে দোকানদারেরা গালাগালি করে, গাড়ির সামনে দাঁড়ালে চালকরা, রাস্তার ধারে দাঁড়ালে পথচারীরা। আমরা কোথায় যাব?”
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘এটা ঘটনা যে শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথগুলির মতোই রিকশা স্ট্যান্ডগুলিও ক্রমশ দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা শহরের এই সব বেআইনি দখলদারদের সরাতে একটি টিম তৈরি করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করবে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একটি নিচু জমি আছে। আমরা সেটিকে উঁচু করে স্ট্যান্ড করার কথা ভেবেছিলাম। রেল জমি দিলে আমরা স্ট্যান্ড করে ফেলব।”
তবে এসবের পাশাপাশি রিকশা চালকদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষেরও অভিযোগ কম নেই। পুরসভা বিভিন্ন রুটে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া বেঁধে দিয়েছে। তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ‘রেট চার্ট’। শহরের বিভিন্ন এলাকার মোড়গুলিতে সেই ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি পুরসভার দেওয়া লাইসেন্সের পিছনে সেই তালিকা লিখেও দেওয়া হয়েছে। যাতে যাত্রীরা দরকার পড়লে রিকশায় বসেই প্রকৃত ভাড়া দেখে নিতে পারেন। তারপরেও বেশি ভাড়া চাইলে লাইসেন্স নম্বর দেখে পুরসভায় অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু তারপরেও ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠছে। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সঙ্গীতা মৈত্র বলেন, ‘‘এই শহরে রিকশা চালকদের ভাড়া বেশি চাওয়াটা যেন দস্তুর হয়ে গিয়েছে।” অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত রিকশা চালককে বলে দিয়েছি যে কোনওভাবেই যেন বেশি ভাড়া না চাওয়া হয়। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”