রবীন্দ্রসদন খুলবে কবে, প্রশ্ন বহরমপুরের

হাঁফিয়ে উঠেছেন বহরমপুরের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্তারা। সকলেরই একটাই প্রশ্নআর কত দিন? বহরমপুর রবীন্দ্রসদন সংস্কারের কাজ চলছে গত ২০১৩ সালের মে মাস থেকে। ফলে বছর খানেকের বেশি সময় ধরে ওই মঞ্চে সমস্ত ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩২
Share:

এখনও শেষ হল না নিমার্ণের কাজ। নিজস্ব চিত্র।

হাঁফিয়ে উঠেছেন বহরমপুরের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্তারা। সকলেরই একটাই প্রশ্নআর কত দিন? বহরমপুর রবীন্দ্রসদন সংস্কারের কাজ চলছে গত ২০১৩ সালের মে মাস থেকে। ফলে বছর খানেকের বেশি সময় ধরে ওই মঞ্চে সমস্ত ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বহরমপুরের নাটকের দলগুলি প্রতি বছর নিয়ম করে নাট্যোৎসব আয়োজন করে থাকে। কিন্তু রবীন্দ্রসদনের মঞ্চ ব্যবহার করতে না পারায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে নাট্যোৎসবও। বহরমপুরের এক নৃত্য প্রতিষ্ঠান বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান আয়োজন করা থেকে নিজেদের বিরত রাখে। সব মিলিয়ে বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ অবিলম্বে রবীন্দ্রসদন মঞ্চ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার দাবি তুলেছেন। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও অবশ্য বলেন, “আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে যাবে।” জেলাশাসক বলেন, “এত দিন বহরমপুরে অত্যাধুনিক বাতানূকুল প্রেক্ষাগৃহের অভাব ছিল। সেই অভাব দূর করতেই রবীন্দ্রসদনকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে পুজোর উপহার হিসেবে নতুন রবীন্দ্রসদন মঞ্চ বহরমপুর তথা জেলার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে।”

Advertisement

রবীন্দ্রসদন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শতবর্ষ পূর্তিতে বহরমপুরে একটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের প্রয়োজন থেকেই বহরমপুরের কয়েক জন সংস্কৃতিপ্রেমী ও সচেতন নাগরিক ‘মুর্শিদাবাদ রবীন্দ্র মেমোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন’ নামে সংগঠন তৈরি করেন। ১৯৬৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ওই সংগঠনের জন্ম হয়। ১৫ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত ওই সংগঠনের সভাপতি হন তৎকালীন জেলাশাসক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও বর্তমানে ওই পরিচালন সমিতির প্রায় সকলেই প্রয়াত। রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ উপলক্ষে শুরুতেই জনসাধারণের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ হয় ১ লক্ষ ১২ হাজার ৬৭৯ টাকা ৬৮ পয়সা।

পরে ১৩৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ তৎকালীন জেলাশাসক সিএনপেন অ্যান্টনী রবীন্দ্রসদনের শিলান্যাস করেন। রবীন্দ্রসদন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ৪৮ হাজার ৭৮০ টাকা এবং রাজ্য সরকার ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৮০ টাকা অর্থ সাহায্য করে। সাধারণের কাছ থেকে এবং অন্যান্য খাতে সংগৃহীত হয় ২ লক্ষ ৩২ হাজার ৭২০ টাকা ৫৫ পয়সা। রাজ্য সরকারের স্বল্প সঞ্চয় সংস্থা থেকে জেলাশাসকের মাধ্যমে পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৮০ টাকা ৫৫ পয়সা।

Advertisement

রবীন্দ্রসদনের আলোকসম্পাত, মঞ্চসজ্জা, শব্দ প্রক্ষেপণ-সহ অন্যান্য বিষয়ে সেই সময়ে তাপস সেন ও সুরেশ দত্তের পরামর্শ নেওয়া হয়। এর পরে ১৩৮৫ সালের ২৫ বৈশাখ অর্থাৎ ১৯৭৮ সালের ৯ মে রবীন্দ্রসদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ওই সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন বাণী ঠাকুর ও চিত্তপ্রিয় মুখোপাধ্যায় এবং আবৃত্তিতে ছিলেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।

যদিও চেনা সেই রবীন্দ্রসদন মঞ্চ এই মুহূর্তে উধাও! মঞ্চের পুরনো কাঠের পাটাতন সরিয়ে নতুন পাটাতন বসানোর কাজ চলছে। ভিতরে দর্শক আসনের উপরে বাঁশের মাচা তৈরি করে চলছে ‘ফলস্ সিলিং’ লাগানোর কাজ। পূর্ত দফতরের বহরমপুর ডিভিশন-১ এর সিভিল (কনস্ট্রাকশন) ও ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ এক সঙ্গে কাজ করছে। কনস্ট্রাকশনের জন্য ১ কোটি ১১ লক্ষ এবং ইলেকট্রিকের জন্য ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

ওই অর্থে সাউন্ড, মঞ্চসজ্জা, প্যাডিং, ভিতরের ও বাইরের সৌন্দর্যায়ন, বাতানুকূল ব্যবস্থা, জেনারেটর, চেয়ার বসানো হবে। রবীন্দ্রসদনের এক কর্মী বলেন, “আগে ছিল না, এখন জেভিএল সাউন্ড সিস্টেম, মঞ্চের আলোর জন্য ৩৬ চ্যানেলের পাওয়ার প্যাক কন্ট্রোল বোর্ড ও ক্যাট ওয়ে বা এফওএইচ বসানো হবে। মঞ্চ, দর্শক আসনের পাশাপাশি বাতানুকূল হবে গ্রীনরুমও।” পূর্ত দফতরের বহরমপুর ডিভিশন-১ এর নির্বাহী বাস্তুকার মহম্মদ আশরাফ আলি বলেন, “শুরুতেই দেওয়ালে নতুন করে প্লাস্টার ও রং করার কথা ছিল। সেই সঙ্গে গ্রীলের কাজও ছিল। সেই মতো দরপত্র ঘোষণার পরে স্থানীয় এক এজেন্সীকে ওয়ার্কঅর্ডার দেওয়া হয়। পরে সদনের আমূল সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।”

এ দিকে মঞ্চ না পেয়ে গত বছর যেমন ঋত্বিক বড় আকারে দেশ-বিদেশের নাট্যমেলা করতে পারেনি। এমনকী ঋত্বিক তাদের নতুন নাট্য প্রযোজনা ‘আদি রাজা’ কালেক্টরেট ক্লাবের কমিউনিটি হল ভাড়া নিয়ে সেখানে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করার পরে জেনারেটর ভাড়া করে ক্লোজ-ডোর শো করে। পরে বহরমপুরের বদলে রঘুনাথগঞ্জ রবীন্দ্র ভবনে গিয়ে ওই নতুন নাটক মঞ্চস্থ করতে হয়েছে তাদের। রঙ্গাশ্রম নাট্যগোষ্ঠী তাদের নাট্যোৎসবের সময় পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

বহরমপুরের ছান্দিক নাট্যগোষ্ঠীর বর্ষীয়ান নাট্যকর্মী শক্তিনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে সদন সংস্কারের বিষয়ে শুরুতেই পরিকল্পনার অভাব ছিল। মঞ্চ তৈরির জন্য যে বিশেষজ্ঞ এজেন্সীকে দিয়ে কাজ করানোর প্রয়োজন ছিল, তাও হয়নি।

ফলে দেড় বছরের কাছাকাছি সময় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলিকে ভুগতে হচ্ছে।” ঋত্বিক নাট্যগোষ্ঠীর মোহিতবন্ধু অধিকারী বলেন, “ কাজ শুরু হবে কী ভাবে, সেই পদ্ধতি গত ভাবনায় ঘাটতি ছিল। মঞ্চ তৈরির কাজ তো সাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের মধ্যে পড়ে না। ফলে শুরুর দিকে কাজ ঢিমেতালে হয়েছে। এখন অবশ্য জোরকদমে কাজ হচ্ছে।” তবে নতুন বাতানুকূল রবীন্দ্রসদন মঞ্চের ভাড়া যেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নাট্যদলগুলির সাধ্যের মধ্যে থাকে, সেই দাবিও রয়েছে। আশরাফবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ দিন কাজ বন্ধ ছিল। তবে প্রতি নিয়ত সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজনের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তাঁরা তাঁদের অসুবিধার কথা বলছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মঞ্চ ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া যায়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement