বাংলাদেশি এক তরুণীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে এক মহিলা ও তাঁর সঙ্গীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সেই সঙ্গে অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশি ওই তরুণীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাতে নদিয়া জেলার হাঁসখালির মুড়াগাছা-মিলননগরের বাসিন্দা মমতা বালার বাড়ি থেকে পালিয়ে পড়শিদের কাছে আশ্রয় চায় বাংলাদেশি এক তরুণী। এরপরই ওই তরুণীকে জোর করে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানোর আভিযোগ তুলে মমতাদেবীর বাড়ি ভাঙচুর করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে মমতাদেবী, তরুণী ছাড়াও এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তিন জনকেই পরে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত হানিফ বাফরা গুজরাতের কচ জেলার কুনা এলাকার বাসিন্দা। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘ওই বাংলাদেশি তরুণী কী ভাবে এ রাজ্যে এলেন, তাঁর উপরে কোনও রকম অত্যাচার হয়েছে কি না আমরা তা খতিয়ে দেখছি।”
জেরায় ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বানেরহাট এলাকায় তাঁর বাড়ি। বাবা-মা মারা গিয়েছেন। অভাবের সংসারে সত্মাও খেতে-পরতে দিতেন না। এলাকারই এক পরিচিত ব্যক্তি তাঁকে ভারতে মোটা টাকা কাজের প্রলোভন দেখায়। বছর তিনেক আগে দালাল মারফত অবৈধ ভাবে এ দেশে এসেছিলেন তিনি। তারপর নানা হাত ঘুরে পৌঁছে যান মুম্বই। সেখান থেকে গুজরাত। গুজরাতের কুনা এলাকায় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ধৃত মমতা বালার। মাসখানেক আগে মমতাদেবীর সঙ্গে হাঁসখালিতে আসেন ওই তরুণী। সঙ্গে আসেন হানিফ বাফনাও। হাঁসখালি থানার এক তদম্তকারী পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মেয়েটি কিছুই বলতে পারছে না। কথাবার্তা অসংলগ্ন। তরুণীর সঙ্গে কথা বলে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
তরুণী সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলতে না পারলেও মমতাদেবীকে সন্দেহের চোখেই দেখেন এলাকাবাসী। মমতাদেবীর স্বামী নিখোঁজ দীর্ঘদিন। বছর চারেক আগে মমতাদেবী গুজরাতে যান কাজ করতে। সেখানে একটি হোটেলে রাঁধুনীর কাজ করেন বলে মমতাদেবীর দাবি। প্রায় ছ’মাস অন্তর তিনি বাড়িতে আসেন। ইতিমধ্যে বিশাল দোতলা বাড়িও বানিয়ে ফেলেছেন। এলাকাবাসীর দাবি, রান্নার কাজ করে অত বড় বাড়ি বানানো সম্ভব নয়। মমতাদেবী নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। বুধবার রাত আটটা নাগাদ বাংলাদেশি তরুণী পাঁচিল টপকে বাইরে বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীদের কাছে আশ্রয় চায়। প্রতিবেশীদের দাবি, বাংলাদেশী ওই তরুণী তাঁদের জানিয়েছেন, দিনের পর দিন ঘরের ভিতরে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানো হত তাঁর উপরে। সব কথা শুনে এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে মমতাদেবীর বাড়িতে চড়াও হন। বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাঁরা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা উর্মিলা বিশ্বাস বলেন, ‘‘এত কম দিনে শুধুু হোটেলে রান্না করে এত বড় বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয়। আমাদের সন্দেহ এ সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হল।