চটির মাঠে নামছে হেলিকপ্টার। ছবি: দেবাশিস বন্দোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী নাকি আসতে পারেন। তাই নবদ্বীপের আকাশে শুরু হয়েছে পবনহংসের ওড়াউড়ি। মঙ্গলবার দুপুর ১টার কিছু পরে বাতাস কাঁপিয়ে সে হেলিকপ্টার যখন নামল চটির মাঠে, তখনও কেউ নবদ্বীপবাসী জানেন না কে এলেন! তাই শুরু হল পড়িমরি ছুট। যাঁরা নামলেন, তাঁদের চেনেন না বাসিন্দারা। তাই কেউ বললেন ‘রাজ্যপাল আসছেন’, কেউ বললেন ‘মোদীই এলেন।’ তবে হেলিকপ্টার থেকে নামা মানুষগুলো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন হুশহাশ।
তারপর থেকেই শহর জুড়ে আলোচনার শেষ নেই। ওই চটির মাঠে অর্থাৎ রয়্যাল ক্লাব ফুটবল গ্রাউন্ডে এর আগে নেমেছে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী-সহ বহু তাবড় নেতানেত্রীর কপ্টার। তবে সেসব ক্ষেত্রে আগে থেকে শহরে প্রচার চলত। এমন হঠাৎ হেলিকপ্টার নামেনি আগে কখনও। তাই জল্পনা তুঙ্গে।
পরে অবশ্য জানা গেল ওই চপারে এসেছিলেন রাজ্যের এডিজি (সাউথবেঙ্গল) সি ভি মুরলীধর এবং ডাইরেক্টর সিকিউরিটি শ্রী বীরেন্দ্রকুমার।
আগমনের হেতু নিয়ে সরকারি ভাবে কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে জানা গিয়েছে ১৫ এবং ১৬ জানুয়ারি দু’দিনের নবদ্বীপ মায়াপুর সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সফরের আগে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতেই এদিন শহরে আসেন রাজ্যের দুই উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা। আগে থেকেই অস্থায়ী হেলিপ্যাডে হাজির ছিলেন নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ, ডিআইজি (মুর্শিদাবাদ রেঞ্জ) জ্ঞানবন্ত সিংহ প্রমুখ। ওই দিন নবদ্বীপে নেমেই তাঁরা চলে যান নবদ্বীপে গঙ্গার ধারে পিএইচই’র গেস্টহাউস দেখতে। সঙ্গে ছিলেন নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। প্রায় ৪০ মিনিট পরে তাঁরা ফিরে যান।
জেলা পুলিশ এবং প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য নবদ্বীপ-মায়াপুর সফরের আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতেই এই আয়োজন। সফরের প্রথম দিন মুখ্যমন্ত্রী মায়াপুর ইস্কন বা নবদ্বীপের পিএইচই গেস্টহাউসের মধ্যে কোনও এক জায়গায় রাত্রিবাস করবেন। পরদিন নবদ্বীপে একটি জনসভা করে ফিরে যাবেন।
মঙ্গলবার মায়াপুর এবং নবদ্বীপে তাঁর সম্ভাব্য রাত্রিবাসের জায়গা, মায়াপুর থেকে নবদ্বীপে আসতে কত সময় লাগবে, নবদ্বীপে রাত কাটালে হেলিপ্যাড থেকে রাত্রিবাসের জায়গার দূরত্ব, যে পথে যাবেন সেই পথ এবং জনসভার সম্ভাব্য স্থানে বিষয়ে সব খুঁটিয়ে দেখে ছবি তুলে নিয়ে যান দুই আধিকারিক। তাঁদের পরিদর্শন রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে সম্ভাব্য সফরের রূপরেখা।
যদিও নদিয়ার পুলিশ সুপার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকী এই এলাহি পরিদর্শন মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য কিনা জানতে চাইলেও তিনি বলেন, “এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।” অন্যদিকে নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আসার কথা আছে, আমরাও শুনেছি। তবে এখনও সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি।”
যদিও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী রুটিন জেলা সফরে এবার নদিয়ায় জন্য নবদ্বীপ-মায়াপুরকে বাছা হয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী আসেন তাহলে নবদ্বীপেই আসবেন। সেই মতোই সব কিছু খতিয়ে দেখে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নবদ্বীপের বিধায়ক তথা মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “সরকারি ভাবে এখনও কিছু বলা হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন জেডপ্লাস পর্যায়ের নিরাপত্তা পান। সেই কারণে তাঁর কোথাও সফর মানে নিরাপত্তার প্রশ্নে দারুণ কড়াকড়ি। অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে তাঁর সফর। সে সব চূড়ান্ত না হলে কিছুই বলা যায় না।”
মন্ত্রী অবশ্য মনে করিয়ে দেন তাঁর অনুরোধের কথাটি। তিনি বলেন, “শেষ বার নবদ্বীপে এসেছিলেন ২০০০ সালে। তখনও আমি বিধায়ক হইনি। তাই মাস কয়েক আগে যখন উনি জেলা সফরে নদিয়ায় এসেছিলেন তখন বলেছিলাম একবার নবদ্বীপে আসতে। হয়ত সে কথা মনে রেখেই এবারে জেলা সফরে নবদ্বীপের কথা ভেবেছেন। এখনও চূড়ান্ত ভাবে কিছু জানানো হয়নি আমাকে।”
প্রায় একই কথা বলেন নবদ্বীপের পুরপ্রধানও। তৃণমূলের বিমান কৃষ্ণ সাহা বলেন, “শুনেছি ১৫-১৬ জানুয়ারি নবদ্বীপ মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে পরিদর্শনও হয়েছে। আমি নদিয়ার জেলাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছি নবদ্বীপ পুরসভার তরফে একটি নতুন অডিটোরিয়াম তৈরি করা হয়েছে, আমরা সেটি মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করাতে চাই। এখনও সে বিষয়ে কোন উত্তর পাইনি।”
কেউ কিছু না জানলেও তৈরি রয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। সেই মতো বাতিল হয়েছে অধীর চৌধুরীর সভার প্রস্তাবও। নদিয়া জেলা কংগ্রেসে কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল সাহা জানিয়েছেন ১৬ জানুয়ারি নবদ্বীপে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির একটি জনসভার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। পুলিশের কাছে অনুমতিও চেয়েছিলাম। বুধবার পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে ওইদিন মুখ্যমন্ত্রীর সভার কারণে আমাদের অনুমতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অধীর চৌধুরীর সভা করতে হবে ১৭ জানুয়ারি।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুধু যে জল্পনা, তাই নয়। রাজনীতি সচেতন পাড়ার আড্ডায় ইতিউতি নানা মন্তব্যও উঠে আসছে। প্রশ্ন সজাগ তৃণমূলের ‘গড়’ বলে পরিচিত নবদ্বীপে হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী কেন? নিছকই প্রিয়পাত্র নন্দর কথা রাখতে! নাকি গঙ্গার দু’পাড়ের মন্দির নগরীতে বিজেপি-র নিঃশব্দ বাড়বাড়ন্তের খবর পেয়েছেন তিনি? পুরভোটের আগে নিজের দলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটিতে এসে বলতে চান ‘আমি তোমাদেরই লোক।’