মুক্তিপণের দাবি ভাঁওতা, সন্দেহ পুলিশের

পাট ক্ষেত থেকে নিখোঁজ বালকের পচাগলা দেহ উদ্ধারের পর রহস্য ঘনীভূত হল আরও। সোমবার সন্ধ্যা থেকে খোঁজ মিলছিল না নদিয়ার হাঁসখালি থানার গাঁড়াপোতা-কলাবাগান এলাকার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রজত বিশ্বাসের (৯)। রাতে তার জেঠার মোবাইলে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এসেছিল। বুধবার দুপুরেও ওই বালকের কাকার মোবাইলে এসএমএস করে মুক্তিপণ হিসাবে ৬০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি পাট ক্ষেতের ভিতরে পচাগলা মৃতদেহটি দেখতে পান এলাকাবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাঁসখালি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:১৯
Share:

পাট খেতে মৃতদেহের পাশে পুলিশ কুকুরের তদন্ত। —নিজস্ব চিত্র।

পাট ক্ষেত থেকে নিখোঁজ বালকের পচাগলা দেহ উদ্ধারের পর রহস্য ঘনীভূত হল আরও।

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যা থেকে খোঁজ মিলছিল না নদিয়ার হাঁসখালি থানার গাঁড়াপোতা-কলাবাগান এলাকার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রজত বিশ্বাসের (৯)। রাতে তার জেঠার মোবাইলে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এসেছিল। বুধবার দুপুরেও ওই বালকের কাকার মোবাইলে এসএমএস করে মুক্তিপণ হিসাবে ৬০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি পাট ক্ষেতের ভিতরে পচাগলা মৃতদেহটি দেখতে পান এলাকাবাসী। পুলিশের অনুমান, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতেই মুক্তিপণের নাটক সাজানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ কুকুর এসে ওই বালকেরই বাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরি করেছে। তাই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কারও এর পিছনে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

এ দিকে, যে ফোন নম্বর থেকে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল জেঠার কাছে, তার সূত্র ধরে বুধবার রাতে নবদ্বীপের বড়ালঘাট থেকে চৈতালি পাল ও প্রাচীন মায়াপুর থেকে সঞ্জয় দাস নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাদের কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হলে তিন দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘দেহটিতে যে ভাবে পচন ধরেছে, তাতে অনেক আগেই ওই বালককে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আশা করছি দ্রুত আমরা অপরাধীদের ধরে ফেলতে পারব।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাঁড়াপোতা বাজারে নিহত রজতের বাবা মিলন বিশ্বাসের ছোট মিষ্টির দোকান আছে। মিলনবাবুর তিন মেয়ে এক ছেলে। রজতই ছোট। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ত সে। সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে সামনের রাস্তায় খেলাধূলা করছিল সে। তারপর থেকে তার আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। সন্ধে হয়ে যাওয়ার পরও ছেলে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বাড়ির চারপাশে পাট গাছের ক্ষেত। সকলে মিলে সেই পাটক্ষেতের ভিতরে খোঁজাখুঁজি করার সময় রজতের জেঠা বিজন বিশ্বাসের মোবাইলে একটা ফোন আসে। বিজনবাবু বলেন, ‘‘আমার মোবাইলে একজন ফোন করে বলে যে খোঁজাখুঁজি করার দরকার নেই। আমরা যেন টাকা জোগাড় করে রাখি। তারপর ফোনটা কেটে দেয়। এর পরে আমরা অনেকবার ওই নম্বরে ফোন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সুইচ অফ বলছিল।” গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজির পরে ভোরে বগুলা স্টেশনে যান পরিবারের লোকজন। শিয়ালদহগামী ট্রেনের প্রতিটি কামরায় তল্লাশি চালানো হয়। বালকের বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ফতেপুর বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাতেও খোঁজাখুঁজি করা হয়।

বুধবার দুপুরে আবার নিহতের কাকা গোবিন্দ বিশ্বাসকে অন্য একটি নম্বর থেকে এসএমএস করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। গোবিন্দবাবু বলেন, ‘‘বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ হঠাৎ দেখি আমার মোবাইলে একটা এসএমএস ঢুকল। তাতে হিন্দিতে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ হিসাবে চাওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই।” বৃহস্পতিবার সকালে পাট ক্ষেতের পাশে ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মৃতদেহটি দেখতে পান।

তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মুক্তিপণটা সাজানো নাটক বলেই মনে হচ্ছে। কারণ অপহরণকারী যদি টাকার জন্যই অপহরণ করে থাকে তাহলে বাবাকে ফোন না করে জেঠাকে করবে কেন?’’ তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের দাবি, “শিশুটির মৃতদেহে যে ভাবে পচন ধরেছে, তাতে ৪৮ ঘণ্টার আগেই তাকে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বুধবার দুপুরে আবারও মুক্তিপণ চেয়ে কাকার মোবাইলে অপহরণকারীরা এসএমএস করতে গেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” যে নম্বর থেকে জেঠার কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল, সেই নম্বর থেকেই একাধিকবার ফোন গিয়েছে নবদ্বীপের চৈতালি ও সঞ্জয়ের কাছে। তবে ধৃতদের সঙ্গে এখনও ঘটনার যোগসূত্র খুঁজে বার করতে পারেনি পুলিশ। কাকা ও জেঠা দু’জনেরই মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, নিহত বালকের পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ এই খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্তযে বা যারা ঘটনার পর ওই বালকের পরিবারের গতিবিধির উপরে নজর রাখছিল। এদিন মৃতদেহটি দেখার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে গ্রামবাসীরা পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত করার দাবি করতে থাকে। কিছু সময়ের মধ্যেই বিএসএফ-এর কুকুর নিয়ে আসা হয়। কুকুরটি মৃতদেহের কাছ থেকে ওই বালকেরই বাড়ির একটু দূরে ঘোরাঘুরি করে আবার মৃতদেহের কাছে চলে আসে। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এই পরিবারের আশপাশের ঘনিষ্ঠ কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। কুকুরটিও এমন কিছু সঙ্কেত দিয়েছে, যাতে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement