গত কয়েক বছর ধরেই মন্দা যাচ্ছিল চৈত্র সেল। চড়া রোদে বাজার এ বার আরও মন্দা। এপ্রিল মাসের প্রথম শনি, রবিও চলে গেল সাদামাটা ভাবে। রকমসকম দেখে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের।
আগে এই সময়টা দুপুর হতে না হতে আশপাশের গাঁ-গঞ্জ থেকে কাঁখে-কোলে ছেলেপুলে নিয়ে সেলের বাজারে ভিড় করতেন বাড়ির বউরা। নবদ্বীপের রাধাবাজারে সেলের অস্থায়ী বাজারে চৈত্রের শেষ সাত-দশ দিন নাওয়া-খাওয়ার সুযোগ পেতেন না বিক্রেতারা। এ বার সেখানে রোদ পড়তে ভিড়টা হয়তো বাড়ছে, কিন্তু সেই উন্মাদনা যেন নেই। এর কারণ কী?
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আগে বছরে এক বারই কম দামে আটপৌরে জামাকাপড় কিনে নিতেন বাড়ির লোকজন। এখন বছরভর সেখানে টুকটাক করে কেনাকাটা চলে। সেলের বাজার পড়ে যাওয়ার মূল কারণ এটাই। ভোট আর গরমের জন্য ভিড়টা আরও পাতলা এ বার।
গরমটা না-হয় বেশি। কিন্তু ভোটের সঙ্গে কী কেনাকাটার সম্পর্ক থাকে? ফুলিয়ার ব্যবসায়ী শান্তি দত্ত বলেন, “সরাসরি হয়তো সম্পর্ক নেই। তবে সরকারি কর্মীরা ব্যস্ত ভোটের ট্রেনিং নিতে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ব্যস্ত প্রচারে। তাঁদের সেলের কেনাকাটায় সময় নেই। আর গ্রামের লোকজন এই ভোটের আবহে শহরে আসা পছন্দ করেন না মোটে।”
কারণ যা-ই হোক, সেলের বাজার যে জমেনি, সেটা নিশ্চিত। নবদ্বীপের মাছ বিক্রেতা ধ্রুব রায় বছরে এই একটা মাস মহাজনের কাছে ধার নিয়ে ‘সেলের’ কারবার করেন। এ বার কেনাবেচা ভাল হয়নি বলে জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “প্রথম দিকটা খুবই মন্দা গিয়েছে। তবে গত শনিবার থেকে ছবিটা বদলেছে। মনে হয় শেষ ক’টা দিনে ঘাটতি পুষিয়ে দেবে।” রাধাবাজার পার্কে অস্থায়ী সেলের বাজারের বিক্রেতা বিশাল রায় বলেন, “পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগিয়েছি। শেষ ক’টা দিন ঠিকঠাক বিক্রি হলে গায়ে-গায়ে আয় হবে। অন্য বারের মতো লোকজন নেই এ বার। ফলে লাভের আশা করছি না।”
মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দিতে সেলের বাজার না জমার জন্য আবার ব্যবসায়ীরা আলুর ফলন কম হওয়াকে দায়ী করছেন। কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকেশ্বর প্রামাণিক বলেন, “এখানে চাষিরাই আমাদের ক্রেতা। কিন্তু এবার আলু চাষে ফলন ভাল না হওয়ায় চাষিরা সেলের বাজারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।” কান্দির জুতো ব্যবসায়ী রাজু দত্ত বলেন, “কারণ কী জানি না। তবে, প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেল সেলের মাল তুলে বসে আছি। এখনও বাজার জমল না। দেখি সামনের শনি, রবিটাই ভরসা।”