বিএসএনএল পরিষেবা ব্যহত, নাকাল কান্দি

গত আট মাস ধরে বোবা টেলিফোন। তবু প্রতি মাসে নিয়ম করে বিল আসে বাড়িতে। কান্দি মহকুমা এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা বিএসএনএল-র ল্যান্ডলাইন পরিষেবা প্রায় বন্ধ। কোথাও মাটি খুঁড়ে জলের পাইপ লাইন বসানোর জন্য, তো কোথাও রাস্তা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে, কোথাও আবার চুরি যাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে টেলিফোন পরিষেবা। উৎসবমুখর দিনগুলিতে বিপাকে পড়েছেন কান্দি মহকুমার কয়েক হাজার গ্রাহক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩৭
Share:

গত আট মাস ধরে বোবা টেলিফোন। তবু প্রতি মাসে নিয়ম করে বিল আসে বাড়িতে। কান্দি মহকুমা এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা বিএসএনএল-র ল্যান্ডলাইন পরিষেবা প্রায় বন্ধ।

Advertisement

কোথাও মাটি খুঁড়ে জলের পাইপ লাইন বসানোর জন্য, তো কোথাও রাস্তা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে, কোথাও আবার চুরি যাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে টেলিফোন পরিষেবা। উৎসবমুখর দিনগুলিতে বিপাকে পড়েছেন কান্দি মহকুমার কয়েক হাজার গ্রাহক।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে খোশবাসপুর, গোকর্ণ, চাটরা, জিনপাড়া, পাতেণ্ডা ও গোবরহাটি গ্রামের টেলিফোন যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। কারণ হিসেবে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কান্দি থেকে বহরমপুর রাজ্য সড়কের মধ্যে খোশবাসপুর তেমাথা মোড় থেকে কর্ণসুবর্ণ পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করতে গিয়ে টেলিফোনের কেবল কাটা পড়েছে। ফলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ওই ছ’টি গ্রামের প্রায় দু’শো পরিবার বিএসএনএল-র ল্যান্ড লাইন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত।

Advertisement

কান্দি মহকুমা এলাকায় বিএসএনএল-র মোট ২১ টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ রয়েছে। পরিষেবা বেহাল হওয়ায় উৎসবের দিনগুলিতে যথেষ্ট অস্বস্তিতে বাসিন্দারা। উৎসবে অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন, পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবদের শুভেচ্ছা জানানোর ক্ষেত্রেও এখনও যেটুকু লৌকিকতা বজায় রয়েছে গ্রামাঞ্চলে, তা নিয়েও বিব্রত হতে হচ্ছে। গ্রামের বয়স্ক মানুষদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা কম। ফলে ল্যান্ড লাইনের ব্যবহার এখনও যথেষ্ট জনপ্রিয়। খোশবাসপুরের প্রবীণ বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আনোয়ার আলম বলেন, “বিএসএনএলের ল্যান্ড লাইন পরিষেবা গত ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও প্রতি মাসে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ বিল পাঠিয়েই যাচ্ছে।” তিনি জানান, “আমরা যাঁরা বয়স্ক মানুষ, মোবাইল ব্যবহারে অভ্যস্ত নই। গত সাত মাস ধরে বাড়ির টেলিফোন খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। মোবাইলের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে। অসুবিধা সত্ত্বেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।”

ঠিক কবে থেকে টেলিফোন পরিষেবা চালু হবে, তা নিয়ে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেননি। তারা অবশ্য দায় চাপিয়েছে পূর্ত দফতরের উপরে। কান্দি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের এসডিই (সাব-ডিভিশন্যাল ইঞ্জিনিয়ার) মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য কান্দি মহকুমা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় টেলিফোনের কেবল কাটা পড়েছে। রাস্তা সম্প্রসারণের আগে পূর্ত দফতর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি।” এ দিকে নতুন করে ওই কেবল বসানোর জন্য চার মাস আগে চিঠি পাঠিয়ে পূর্ত দফতরের কাছে অনুমতি চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি বলে মণীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ। পাল্টা পূর্ত দফতরের বহরমপুর ডিভিশন-২ এর নির্বাহী বাস্তুকার মুস্তাফা কামাল বলেন, “রাস্তার ধারে টেলিফোনের কেবল পাতার জন্য অনুমতি নিতে হলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অর্থ জমা করার কথা। বিএসএলএল কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ভাবে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনও অর্থ জমা করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। ফলে সরকারি নিয়মের বাইরে করণীয় কিছু নেই।” তাঁর বক্তব্য পূর্ত দফতরকে অন্ধকারে রেখে টেলিফোনের কেবল পাতার ফলে ওই দুর্ঘটনা ঘটছে। পূর্ত দফতরের অনুমতি নিয়ে কেবল পাতা হলে তার মানচিত্র থাকত। সেক্ষেত্রে রাস্তা সম্প্রসারণ করার আগে নির্মাণকারী সংস্থাকে সতর্ক করে দেওয়া হত, যাতে কেবল কাটা না পড়ে। শুধু ল্যান্ডলাইন নয়। পূর্ত দফতর ও বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের চাপানউতোরের মাঝে বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড সংযোগও বিচ্ছিন্ন। ইন্টারনেট ব্যবহারও করতে পারছেন না বাসিন্দারা। কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ক্ষোভ বাড়ছে গ্রাহকদের। তাঁদের অনেকেই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করার কথাও ভাবনচিন্তা করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement