কৃষ্ণগঞ্জ কাণ্ড

পুলিশে ভরসা কম, জবানবন্দি দিতে চায় আহতরা

পুলিশ বলছে, গুলিবিদ্ধরা চিকিৎসাধীন। আদালতে জবানবন্দি দেওয়া এখনও সম্ভব নয়। গুলিতে আহত গ্রামবাসীরা বলছেন, তাঁরা তৈরি আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে। পুলিশকে এ বিষয়ে বারবার তাগাদাও দিচ্ছেন তাঁরা। শেষ অবধি ঠিক করেছেন, তাঁরা নিজেরাই আবেদন করবেন আদালতের কাছে। ২৩ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে জমি মাফিয়াদের ভাড়া-করা গুন্ডাদের গুলিতে নিহত বধূ অপর্ণা বাগের মেয়ে নীলিমা বলেন, “আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে পুলিশ এখনও কথা বলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১২
Share:

পুলিশ বলছে, গুলিবিদ্ধরা চিকিৎসাধীন। আদালতে জবানবন্দি দেওয়া এখনও সম্ভব নয়। গুলিতে আহত গ্রামবাসীরা বলছেন, তাঁরা তৈরি আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে। পুলিশকে এ বিষয়ে বারবার তাগাদাও দিচ্ছেন তাঁরা। শেষ অবধি ঠিক করেছেন, তাঁরা নিজেরাই আবেদন করবেন আদালতের কাছে। ২৩ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে জমি মাফিয়াদের ভাড়া-করা গুন্ডাদের গুলিতে নিহত বধূ অপর্ণা বাগের মেয়ে নীলিমা বলেন, “আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে পুলিশ এখনও কথা বলেনি। পুলিশ কী করছে, স্পষ্ট নয়। তাই আমরা সরাসরি আদালতেই যা বলার বলতে চাই। সেই সুযোগ আমাদের দেওয়া হোক।”

Advertisement

ঘুঘড়াগাছির গ্রামবাসীদের একাংশের সন্দেহ, শাসক দলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের বাঁচাতেই আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করছে পুলিশ। ঘুঘড়াগাছি গ্রামের ২২ বিঘা জমি জোর করে দখল করতে মাস খানেক আগে বোমা, গুলি নিয়ে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। ফসলের উপর তাদের ট্রাক্টার চালাতে দেখে ছুটে আসেন গ্রামের মহিলারা। তখনই গুলি লেগে লুটিয়ে পড়েন অপর্ণা বাগ (৩৭)। গালে গুলি লাগে শ্যামলীর। আরও এক মহিলা এবং এক কিশোরও গুলিবিদ্ধ হ’ন। মোট ১২ জনের নামে অভিযোগ হলেও, পুলিশ এখনও অবধি গ্রেফতার করতে পেরেছে কেবল দু’জনকে। তাঁদের মধ্যে লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কা শাসকদলের জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। লঙ্কা নিজেও সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজেকে তৃণমূল কর্মী, এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা লক্ষ্মণ ঘোষচৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছে। লক্ষ্মণবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি লঙ্কাকে চেনেন না। কিন্তু তৃণমূলের নানা মিটিং-মিছিলে গ্রামবাসী দেখেছেন লঙ্কাকে। তাই অপর্ণাদেবীর মর্মান্তিক মৃত্যুর তদন্তে পুলিশের টালবাহানার পিছনে ‘রাজনৈতিক চাপ’ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।

পুলিশের দাবি, ঘটনার তিন মাসের মধ্যে জবানবন্দি নেওয়া যায়। এখনও দু’মাস সময় রয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসী চাইছেন, যথাশীঘ্র সম্ভব আদালতে ১৬৪ ধারার অধীনে গোপন জবানবন্দি দিক আহতরা। কারণ ওই জবানবন্দিতে দেওয়া বয়ান পরবর্তী কালে বদলানো যায় না। সেখানে যাদের নাম উল্লেখ করা হবে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার চাপ থাকে পুলিশের উপর। গ্রামবাসীর সঙ্গে একমত জেলা আদালতের আইনজীবীরাও। কৃষ্ণনগর সিজেএম আদালতের সরকার পক্ষের আইনজীবী বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আহতরা সুস্থ হয়ে থাকলে এবং আগ্রহী হলে ১৬৪ ধারায় বয়ান দিতে পারেন।” কৃষ্ণননগর জেলা আদালতের আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, “গোপন জবানবন্দি দিতে দেরি হলে, হাতে সময় পেয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তরা ভয় দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বিপাকে ফেলতে পারে। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লোপাট করতে পারে।”

Advertisement

কেন দ্রুত ১৬৪ ধারায় গোপন জবানবন্দি দেওয়া জরুরি, তা ব্যাখ্যা করে সামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, দেরি হলে সাক্ষীদের উপরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে। তাতে আসামী পক্ষের সুবিধা হতে পারে। তাঁর প্রশ্ন, এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে পুলিশ কেন এক মাসের মধ্যেও ১৬৪ ধারা মোতাবেক গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা করল না? তিনি বলেন, “আহতরাই গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করবেন বলে জানতে পেরেছি। এটা থেকেই তো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আক্রান্তেরা পুলিশে ভরসা রাখতে পারছেন না।”

ঘটনায় জখম ছাত্র রাজীব মণ্ডল এখনও কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু ২৭ নভেম্বর শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন লতিকা তরফদার। দিন তিনেক হল কলকাতার পিজি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন আরেক জখম শ্যামলী তরফদারও। গ্রামের মানুষের অভিযোগ, এত দিনে পুলিশ চাইলে লতিকাদেবীর জবানবন্দি বিচারকের সামনে নিয়ে গিয়ে করাতে পারতেন। কিন্তু তা করানো হয়নি। কলকাতায় এসএসকেএম-এ ভর্তি থাকার সময়ে পুলিশ একবার শ্যামলীদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাঁকে। তারপর আর কথা এগোয়নি।

বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দিতে আগ্রহী ঘটনায় আহত শ্যামলী। তিনি বলেন, “সেদিনের ঘটনা কোনও ভাবেই ভুলতে পারছি না। জমি দখলের খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম মাঠে। সকলের সঙ্গে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু ওরা গুলি চালাতে শুরু করলে পালিয়ে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু গুলি এসে লাগল আমার গালে।” তাঁর দেখা ঘটনাই তিনি বিচারকের কাছে খুলে বলতে চান, জানান শ্যামলী। “আমি চাই, ওদের কঠিন শাস্তি হোক,” বলেন তিনি।

এখনও পর্যন্ত আদালতে জবানবন্দি না করানোর জন্য কোনও সমস্যা হবে না, দাবি করছেন জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ। তিনি বলেন, “তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে যখন প্রয়োজন হবে সেই সময়েই আমরা গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা করাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement