বহরমপুর কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের ফাইল চিত্র।
মুর্শিদাবাদের কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু তার আগেই কলেজ ভোটকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ বাড়তে শুরু করেছে! গত ২২ ও ২৪ নভেম্বর দু’দিনের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বহরমপুরে দুটি কলেজবহরমপুর কলেজ ও কৃষ্ণনাথ কলেজ। বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গিপুর কলেজের এসএফআই এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা। আর কলেজ নির্বাচনের আগে নিজেদের জমি শক্ত করতে যে ভাবে ছাত্র সংগঠনগুলি নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে শুরু করেছে তাতে উদ্বিগ্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ ভোটের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র-নেতাদের ‘মদত’ দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। এক শ্রেণির জেলা নেতার ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য কলেজ ভোটে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেও মত রাজনীতির কারবারিদের। সম্প্রতি বহরমপুর ঋত্বিক সদনে অনুষ্ঠিত এক কর্মিসভায় দলীয় ছাত্র নেতাদের উৎসাহিত করতে জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, “কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিততে যত রকমের সাহায্য দরকার, আমরা করব। ছাত্র পরিষদকে কলেজ থেকে উৎখাত করতে যে কোনও প্রকারের সাহায্য করব।”
ওই কর্মিসভায় মান্নানের বক্তব্য থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, কলেজ ভোটে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জয়-পরাজয়কে তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখন ফিরিয়ে দেওয়ার’ হিসেব-নিকেশের দাঁড়িপাল্লাতে মাপছেন। মান্নান বলেন, “আমাদের জেলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এত কিছু করেছেন। কিন্তু আমরা তাঁকে কোনও কিছুই ফিরিয়ে দিতে পারিনি। বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংসদ থেকে ছাত্র পরিষদকে হঠিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ দখল করতে পারলে দলনেত্রীকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারলাম বলেই মনে করব।” আর সেই কারণেই ছাত্রনেতাদের ‘জান-প্রাণ’ দিয়ে কলেজে ভোটে লড়াই করার দাওয়াই দেন মান্নান।
মান্নানের এমন বক্তব্যে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের আশঙ্কা, তৃণমূল নেতার এমন বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর দলের ছাত্র নেতারা কলেজগুলিতে ‘দখলের রাজনীতি’ শুরু করলে তার ফল ভয়াবহ হবে। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “ওই কর্মিসভায় মাননীয় মান্নান হোসেন তাঁর দলীয় ছাত্রনেতাদের দখলের রাজনীতির পাঠ শিখিয়েছেন। আমরা দখলের রাজনীতির বিপক্ষে। কলেজ ভোটে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে না পারলে ছাত্র পরিষদ তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।”
‘দখলের রাজনীতি’ বনাম ‘প্রতিরোধের রাজনীতি’ থেকে অবশ্য ‘দূরে’ থাকতে চাইছে এসএফআই। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “দখলের রাজনীতি ও প্রতিরোধের রাজনীতি থেকে এসএফআই দূরে সরে থাকতে চায়। কলেজ নির্বাচনের আগে এখন ঘর গুছিয়ে নেওয়ার সময়। কিন্তু সেই সময়ে বিশেষ করে বহরমপুরের দুটি কলেজে যে ধুন্ধুুমার কাণ্ড চলছে, সেই পরিস্থিতিতে দলীয় সদস্য-সমর্থকদের ঠেলে দিয়ে অস্তিত্বের সঙ্কট বাড়াতে চাই না।”
তবে কলেজে ভোটে তারা যে সর্বশক্তি দিয়ে লড়বে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মিসভা থেকেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ জর্জরিত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষে কি এত সহজে ছাত্র পরিষদকে হঠানো সম্ভব হবে? সম্প্রতি জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে আসিফ আহমেদের নাম ঘোষণার পরেই ওই গোষ্ঠী কোন্দল চরমে উঠেছে বলেও অভিযোগ।
অশোকবাবু বলেন, “নিজেদের মধ্যে আগে লড়াই বন্ধ করুক। তার পরে ছাত্র পরিষদের সঙ্গে লড়তে আসবে।” আর মুস্তাফিজুর বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এখন থেকেই ভোট বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে ভোটের দিন এগিয়ে আসতেই তাঁরা মিথ্যা মামলায় আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টাও শুরু করেছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, “ছাত্র পরিষদ ও এসএফআইয়ের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। মান্নান হোসেন দলকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলেছেল। আমাদের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। আর ছাত্রছাত্রীরা রায় আমাদের পক্ষেই দেবেন।”