প্রচারে এগিয়ে সিপিএম, প্রার্থীর আশায় এখনও দিন গুনছে কংগ্রেস

ছোটখাটো ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামলে আগেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা। দু’এক দিনের মধ্যেই প্রচারে নেমে পড়বেন তৃণমূল প্রার্থী তাপস পালও। বৃহস্পতিবারই বিজেপি-র সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (জলুবাবু) ধুবুলিয়ায় একটি কর্মিসভার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে নেমে পড়েছেন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০১:১৫
Share:

তেহট্টে বামেদের দেওয়াল লিখন। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

ছোটখাটো ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামলে আগেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা। দু’এক দিনের মধ্যেই প্রচারে নেমে পড়বেন তৃণমূল প্রার্থী তাপস পালও। বৃহস্পতিবারই বিজেপি-র সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (জলুবাবু) ধুবুলিয়ায় একটি কর্মিসভার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে নেমে পড়েছেন। শুধু কংগ্রেস এখনও প্রার্থী ঠিক করে উঠতে পারল না কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের। ভোটের ফলে কী হবে জানা নেই, তবে প্রচারের প্রথম রাউন্ডে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে সবার শেষে পড়ে রইল জাতীয় দল কংগ্রেস।

Advertisement

এবার জোর লড়াই কৃষ্ণনগরে। গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে এখানে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। সাতটা বিধানসভা আসনের মধ্যে পাঁচটা তাদের দখলে, সিপিএমের দু’টো। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের পরিসংখ্যানের হিসাবে এগিয়ে আছে সিপিএম। ৭টা পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৫টা তাদের দখলে, দু’টো তৃণমূলের। আবার কৃষ্ণনগর পুরসভা, চাপড়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় কংগ্রেসের পুরনো ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে নেতারা সব তৃণমূলে চলে গেলেও জনগণের সমর্থন কোন দিকে যাবে জানা নেই। প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী জলুবাবুরও নিজের এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়তা আছে। সব মিলিয়ে লড়াইটা এ বার চতুর্মুখীতৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-র মধ্যে।

এর মধ্যে তৃণমূলই প্রথম প্রার্থী ঘোষণা করেগতবারের জয়ী সাংসদ তাপস পাল এ বারও ভোটে লড়ছেন। সেই জন্য তিনি কৃষ্ণনগরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। আজ শহরে আসার কথা তাঁর। ১৫ মার্চ ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে প্রচার কর্মসূচি ঠিক করবেন। তারপর দু’-এক দিনের মধ্যেই শহর থেকে প্রচার শুরু করে দেবেন।

Advertisement

সিপিএম তুলনায় এগিয়ে। প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পরেই কল্যাণী পুরসভার পরপর তিন বারের পুরপ্রধান ও বর্তমানে বিরোধী দলনেতা, কৃষিবিজ্ঞানী শান্তনু ঝা প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। তবে, প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে একটা টানাপোড়েন আছে। প্রথমে জেলা নেতৃত্বের এক প্রভাবশালী অংশ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ ও গতবারের প্রার্থী জ্যোতির্ময়ী সিকদারের নাম প্রস্তাব করে। কিন্তু সব সময় ডাকলে পাওয়া যায় না ইত্যাদি অজুহাতে বাগড়া দেয় অন্য গোষ্ঠী। দলের আর একটি অংশ সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে প্রভাবশালী এক সংখ্যালঘু নেতা ও প্রাক্তন বিধায়কের নাম প্রস্তাব করে। এরই মধ্যে দলের ভিতরে আর এক প্রভাবশালী সংখ্যালঘু নেতা নিজে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে পরিস্থিতি জটিল আকার নেয়। উঠে আসে এক যুব নেতার নামও। এই পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে পড়ে রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ। শেষ পর্যন্ত বিতর্ক এড়াতে এই লোকসভা এলাকার বাইরে থেকে কল্যাণীর সিপিএম নেতা শান্তনু ঝা-র নাম চূড়ান্ত করা হয়। দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “দলে একজন মাত্র যোগ্য ব্যক্তি থাকেন না, একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনার সময় উঠে আসাটা তাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন দিক খতিয়ে এক জনের নামই চূড়ান্ত করতে হয়। জেলা নেতৃত্বের মতামত নিয়েই রাজ্য নেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ দলের নিচু তলার কর্মীরা প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেমে পড়েছেন প্রচারে। তবে, নিজের মনের দুঃখ চেপে রাখেননি জ্যোতির্ময়ী সিকদার। প্রাক্তন সাংসদের কথায়, “আমি যা করেছি দলের নির্দেশ মেনেই করেছি। তারপরেও জানি না দল কিসের ভিত্তিতে আমাকে বাদ দিল? আমাকে কারণ জানানো হয়নি। দল যদি মনে করে আমাকে দিয়ে হবে না, তাহলে আমি তো আর চুপ করে বসে থাকব না। একটা কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।” ‘ভাল মেয়ে’ জ্যোতির্ময়ীদেবীকে নিয়েই অবশ্য প্রচারে বেরোবেন বলে জানিয়েছেন শান্তনুবাবু। তিনি বলেন, “আমি প্রচারের দিনক্ষণ ঠিক করে ওর সঙ্গে কথা বলব। ওকে নিয়েই প্রচারে বেরোব আমি।” তাঁর কথায়, “বহিরাগত বলে কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি কোথাও। কোনও কর্মী আমাকে এমন কথা বলেননি। কারণ আমি এই জেলার মানুষ। তাছাড়া কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে এই সব এলাকায় আমি চাষিদের নিয়ে অনেক কাজ করেছি।”

এ দিকে, প্রার্থী নিয়ে জল্পনা এখনও চলছে কংগ্রেসে। প্রথমটায় ক্রিকেটার আজাহারউদ্দিনকে ঘিরে বড় আশায় বুক বেঁধে ছিলেন কৃষ্ণনগরের কংগ্রেসকর্মীরা। ‘স্টার’ প্রার্থীকে নিয়ে বহু দিন পরে জোর লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এই কেন্দ্রে দাঁড়ানোয় আগ্রহ দেখাননি আজাহারউদ্দিন। দাঁড়াতে চাননি প্রবীণ নেতা শঙ্কর সিংহও। নিজে না দাঁড়ালেও কৃষ্ণনগরে কংগ্রেসের ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “গত পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের সর্বত্র প্রার্থী ছিল না। তারপরেও আমরা ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছি। এ বার সেটা আরও বাড়বে?” কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের সভাপতি রঞ্জিত গুহ বলেন, “বাম বিরোধী ভোট এবার সরাসরি ভাগ হয়ে যাবে। তাই এবার আমাদের ঠিকঠাক প্রার্থী দেওয়াটা খুব জরুরি। সকলেই সেদিকে তাকিয়ে আছি।” চাপড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি নাসিরুদ্দিন শেখও বলেন, “আমরা মনে-প্রাণে চাইছি আমাদের দল এই কেন্দ্রে একটা ভাল প্রার্থী দিক। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই আমাদের ভোট না পেলে জিততে পারত না তৃণমূল।” কিন্তু বাড়বে কী ভাবে? না ঠিক হয়েছে প্রার্থী, না শুরু হয়েছে প্রচার। হতাশ গলায় চাপড়ার এক কংগ্রেসকর্মী বলেন, “গতবার বিজেপি ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এ বার সেটা বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। তার উপরে আমাদের ভোটটাও তৃণমূল পাবে না। সব মিলিয়ে তৃণমূলকে জোর ধাক্কা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দল এখনও প্রার্থীই ঠিক করে উঠতে পারল না। শুরুতেই আমরা মানসিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement