সুরতহাল রিপোর্ট, সিজার লিস্ট থেকে সিডি মৃতের জামাকাপড়ের উল্লেখ থাকলেও জুতোর উল্লেখ নেই কোথাও। তাহলে কী শীতের রাতে খালি পায়েই ছিলেন মৃত সজল ঘোষ? সাক্ষীর থমকে গিয়ে উত্তর, না উল্লেখ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার সজল ঘোষ হত্যা মামলার শেষ পর্বের সাক্ষ্যগ্রহণে তদন্তকারী অফিসার বিভাস সেনকে জেরা করার সময় এমনই নানা তথ্য উঠে এল। নবদ্বীপের অতিরিক্ত ও সেশন জজ সুধীরকুমারের আদালতে এ দিন একমাত্র সাক্ষী ছিলেন বিভাসবাবু। দুপুর আড়াইটে নাগাদ রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে শুনানি শুরু হয়। অনান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে সাদা হাফ শার্ট ও কালো প্যান্ট পরে কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন পারুলিয়ার কুলকামিনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা।
সাক্ষ্যের শুরুতেই নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় জানতে চান, এখন কোথায় কাজ করেন সাক্ষী। বিভাসবাবু জানান, তিনি নবদ্বীপ থানার সাব ইন্সপেক্টর। এরপর কবে তিনি ওই মামলার তদন্তের ভার পান ও কীভাবে তদন্ত শুরু করেন তা জানতে চাওয়া হয়। সাক্ষী জানান, ওই রাতে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছে মৃত সজল ঘোষের দেহের সুরতহাল করেন তিনি। পরে অভিযোগকারিদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল তল্লাশি করেন, স্কেচ ম্যাপ তৈরি করেন এবং ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত জিনিসের সিজার লিস্ট তৈরি করেন। পরে আদালতে সে সব রিপোর্ট শনাক্তও করেন তিনি। এরপরেই আদালতে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া মৃত সজল ঘোষের পোষাক পেশ করা হয়। তাতে ছিল একটি কালো ফুলপ্যান্ট,নস্যি রঙের ফুল সোয়েটার, ঘিয়ে রঙের মাফলার, ব্রাউন বেল্ট এবং রক্তমাখা সাদা গেঞ্জি। বিভাসবাবু জানান, ওই রাতেই নবদ্বীপ হাসপাতালে তদন্ত সেরে বেরিয়ে পড়েন তিনি। নবদ্বীপের তুড়োপাড়া থেকে প্রদীপ সাহা এবং সন্তু ভৌমিককে গ্রেফতারও করেন। পরবর্তীতে অন্য অভিযুক্তদেরও ধরা হয়। বিভাসবাবু জানান, ওই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত লোকনাথ দেবনাথকে ধরতে ত্রিপুরা গিয়েছিলে তিনি। তবে তাকে পাননি। বিকাশবাবুর জিজ্ঞাসার শেষ পর্বে তদন্তকারি অফিসার জানান, তদন্ত শেষে গত ২৭-০৩-১২ তারিখ ওই মামলায় মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন তিনি। সরকারি কৌঁসুলির জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হতেই বিভাস সেনকে জেরা করতে ওঠেন প্রদীপ সাহার আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায়। তিনি প্রথমেই জানতে চান, মৃতের সুরতহাল রিপোর্টে অস্বাভাবিক মৃত্যু বা স্পেসিফিক কেস নম্বর আছে কিনা। সাক্ষী জানান, নেই। পরের প্রশ্ন, সুরতহাল রিপোর্টে তদন্তকারী বলেছেন সুরতহাল হয়েছিল অনেকের উপস্থিতিতে এবং স্পষ্ট আলোয়। কিন্তু সেই স্পষ্ট আলোর কথা স্কেচ ম্যাপ তৈরির সময় তিনি উল্লেখ করেছেন কি? তদন্তকারি বলেন, না, তবে সিডিতে উল্লেখ আছে। প্রতিমবাবু বলেন, বিভাসবাবু বলেছেন অনেক লোকের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল ‘ডেস্ট্রয়েড’ হয়েছিল। ঘটনাস্থলের সেই অবস্থা বোঝানোর জন্য তিনি কোনও ছবি তুলেছিলেন কি? জবাব মেলে না। ওই রাতে সুরতহাল করতে এবং স্কেচ ম্যাপ করতে কত সময় লেগেছিল, এই প্রশ্নের উত্তরে বিভাসবাবু জানান, রাত ১টা ৪৩ মিনিটে শুরু করেছিলেন। কিন্তু কখন শেষ করেন তা বলা সম্ভব নয়। প্রতিমবাবু জানতে চান, ঘটনাস্থলের স্কেচ ম্যাপ বা সুরতহাল করার সময় যথেষ্ট সাক্ষী ছিলেন কি না। বিভাসবাবু বলেন, হ্যা।ঁ আইনজীবী জানতে চান, সজল ঘোষের সুরতহাল রিপোর্টে কি তাঁর সোয়েটারে রক্তের দাগের কথা উল্লেখ আছে। সাক্ষী বলেন, না। একটি ঘিয়ে বাদামি রঙের মাফলারের কি উল্লেখ আছে? উত্তর, না। পরের প্রশ্ন, সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে সজল ঘোষের পরনে ছিল কালো রঙের বেল্ট। অথচ সিজার লিস্টে সেই বেল্টের রং ব্রাউন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিমবাবু বলেন, সিজার লিস্টে রক্তমাখা সাদা গেঞ্জির উল্লেখ থাকলেও, ওই রাতে করা সুরতহাল রিপোর্টে সাদা গেঞ্জির কোনও উল্লেখ নেই। প্রতিমবাবুর প্রশ্ন, সুরতহাল রিপোর্ট, সিজার লিস্ট বা সিডি কোথাও মৃতের জুতোর উল্লেখ নেই। তাহলে কি ওই শীতের রাতে উনি খালি পায়েই ছিলেন? জবাবে বিভাসবাবু স্বীকার করেন জুতোর উল্লেখ নেই। এরপর প্রতিমবাবু জানতে চান সুরতহাল রিপোর্টে লেখা হয়েছে তিনি কালো রঙের ফুলপ্যান্ট এবং ব্ল্যাক ট্রাউজার পড়েছিলেন। তাহলে কি তিনি দুটো প্যান্ট পড়েছিলেন? সাক্ষী জানান, ভুলবশত দু’বার লেখা হয়ে গেছে।
এরপরেই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। শনিবার ওই তদন্তকারী অফিসারকে আবার জেরা করা হবে।