দু’সপ্তাহ দোলের ভিড়ে লক্ষ্মীলাভ নবদ্বীপে

দোলের মরসুমে শ্রীধাম নবদ্বীপে কৃষ্ণকৃপা হোক বা না হোক ব্যবসায়ীদের বিলক্ষণ লক্ষ্মী-লাভ হয়েছে। লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটকের কমবেশি পনেরো দিন ধরে নবদ্বীপে থাকা-খাওয়া-কেনাকাটার ফলে শহরের বাজারটা এক লাফে কয়েকশো গুণ বেড়ে গিয়েছে যেন। এমনকী নবদ্বীপের প্রধান উৎসব বলে পরিচিত রাসের থেকেও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে এ বারের দোলে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০০:৩২
Share:

দোলের মরসুমে শ্রীধাম নবদ্বীপে কৃষ্ণকৃপা হোক বা না হোক ব্যবসায়ীদের বিলক্ষণ লক্ষ্মী-লাভ হয়েছে।

Advertisement

লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটকের কমবেশি পনেরো দিন ধরে নবদ্বীপে থাকা-খাওয়া-কেনাকাটার ফলে শহরের বাজারটা এক লাফে কয়েকশো গুণ বেড়ে গিয়েছে যেন। এমনকী নবদ্বীপের প্রধান উৎসব বলে পরিচিত রাসের থেকেও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে এ বারের দোলে।

নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “একটা সময়ে দোল বলতে গঙ্গার পূর্ব পাড়ের মায়াপুরের ইস্কনের দোল বোঝাত। কিন্তু এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। মায়াপুরকে বাদ দিয়ে নবদ্বীপের দোলও স্বতন্ত্র চরিত্র লাভ করেছে। এলাকার অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে ক্রমশ।”

Advertisement

নবদ্বীপের প্রধান কয়েকটি মঠ যেমন দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ, চৈতন্য সারস্বত মঠ, কেশবজি গৌড়ীয় মঠ বা জন্মস্থান আশ্রম মিলিয়ে কমবেশি ৫০ হাজার ভক্ত এসেছিলেন এ বার। তাঁরা পনেরো দিন ধরে শহরে বাস করেছেন। এ ছাড়াও ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শ’দেড়েক মঠ-মন্দির রয়েছে। এর প্রতিটিতেই দোলের পরিক্রমা করতে ভক্তরা এসেছেন। নবদ্বীপ থানার আইসি তপন কুমার মিশ্র জানান, শুধু দোলের দিন স্থানীয় খেয়াঘাটের টিকিট বিক্রির হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৯৭ হাজার লোক পারাপার করেছেন। কার পার্কিংয়ে প্রায় ১৭০০ গাড়ি ছিল। এছাড়া ট্রেন, বাসে হাজার হাজার মানুষ এসেছেন এবং থেকেছেন। বিদেশিরা খাওয়া-দাওয়া-কেনাকাটা করার জন্য ডলার ভাঙিয়েছেন টাকায়। মুদিখানা থেকে মিষ্টি, শাকসব্জি থেকে তাঁতের শাড়ি, কাঁসার বাসন থেকে গৃহদেবতার পোশাক-গয়না, কেনাকাটার তালিকায় বাদ যায়নি কিছুই। রিকশাচালক থেকে ডাব, নিম্বু পানির ফেরিওয়ালা হাসি মুখে বাড়ি ফিরেছেন সকলে।

এই বিপুল ভিড়টা শহরে একটানা পনেরো দিন থেকে যায়। শহরের দক্ষিণ অঞ্চলে ছোট মিষ্টির দোকান লালু মোদকের। তিনি বলেন, “এমনি সময়ে আমার দোকানে রোজ ২৫ কেজি লাল দই হয়। দোলের মরসুমে সেটা বেড়ে প্রতিদিন এক কুইন্ট্যাল হয়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ কেজি ছানার রসগোল্লা করি। এই সময়ে তা বেড়ে ৩০ কেজি ছানার করতে হয়।”

নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “নবদ্বীপের দোল যত না কৃষ্ণের দোল তার থেকে অনেক বেশি মহাপ্রভুর আবির্ভাব উৎসব। সারা বিশ্বের মানুষ দোলে এখানে আসেন মহাপ্রভুকে স্মরণ করার জন্য। এঁরা ফেরার পথে কিছু স্মারক যেমন নিয়ে যেতে চান, তেমনই নবদ্বীপের অতীত ঐতিহ্যের কাঁসার বাসনপত্র, তাঁতের শাড়িও কিনে নিয়ে যান।”

পেতল-কাঁসার বাসনের ভাল বিক্রি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। শহরের বহু দিনের ব্যবসায়ী দেবেশ গোস্বামী বলেন, “নবদ্বীপের দোল ক্রমশ আমাদের প্রত্যাশা বাড়াচ্ছে। রাসে এক দিনের উৎসবে মানুষ হুল্লোড় করতে আসেন। কেনাবেচা নেই। দোলই যেন প্রধান হয়ে উঠছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement