গত ডিসেম্বরে নদিয়া জেলা সফরে গিয়ে একশো দিনের কাজে গতি দেখে জেলাশাসকের প্রশংসা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই প্রকল্পে রাজ্যে ‘প্রথম স্থান’ দখল করা নদিয়াকে ‘মডেল জেলা’ করার কথাও শোনা গিয়েছিল। অথচ মাস দুয়েক বাদে টাকার অভাবে সেই প্রকল্প ঘিরে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। ঋণ করে ঘি খাওয়ার মতো অন্য প্রকল্প থেকে টাকা নিয়ে কাজ চলছে বটে। তবে চলতি অর্থ বর্ষের শেষ লগ্নে এসে কাজের গতি অক্ষুণ্ণ রাখতে যে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে সে কথা কবুল করছে জেলা প্রশাসনের একাংশ।
জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “আমরা যে টাকা পেয়েছিলাম তার বাইরেও প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাজ করে ফেলেছি। এখন প্রায় একশো কোটি টাকার প্রয়োজন। আমরা রাজ্যের কাছে টাকা চেয়েছি। বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ করে এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
আর জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় এই অবস্থার জন্য কেন্দ্রকে দুষছেন। তিনি বলেন, “অনেক চেষ্টার পর আমাদের জেলাকে একশো দিনের কাজে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে পেরেছি। কিন্তু কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় রাজ্য সরকারও আমাদের টাকা দিতে পারছে না। আর সেই কারণেই টাকার অভাবে আমরা কাজের যে গতি আনতে পেরেছিলাম সেটা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
একশো দিনের প্রকল্পের আর্থিক সঙ্কটের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এ যেন ধার করে সংসার চালানোর মতো। কিন্তু টাকার অভাবে আমরা তো আর কাজ থামিয়ে দিতে পারি না। তাই বিভিন্ন প্রকল্প থেকে টাকা ধার করে একশো দিনের কাজ চলছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নদিয়া জেলা ১৯৯ কোটি টাকা পেয়েছে। কিন্তু এর বাইরে অতিরিক্ত আরও প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এখনও প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজ হবে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। কিন্তু রাজ্যের কাছে টাকা চেয়ে যা মিলেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য।
গত বছর এই জেলা গড়ে ৩৯ দিন কাজ দিতে পেরেছিল। এবার ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৪৩ দিন কাজ দিতে পেরেছে। এই সংখ্যাটা গড়ে ৬০ দিন করার লক্ষ্য জেলা প্রশাসনের। এবারের লেবার বাজেটে শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১ কোটি ৪৯ লক্ষ। ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখের মধ্যে নদিয়া প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করেছে। কিন্তু এই সাফল্য কি ধরে রাখা যাবে? একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নদিয়ার নোডাল অফিসার নীলাঞ্জন পাল বলেন, “ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে আমরা রাজ্যের কাছে ৭৫ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৮ কোটি টাকা পেয়েছি। আরও টাকা না এলে আমরা কিন্তু সত্যিই সমস্যায় পড়ব। কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।”