জমির হিসাবে গত বারের তুলনায় অনেক বেশি চাষ হয়েছিল। কিন্তু উত্পাদনের নিরিখে পেঁয়াজ গত বছরের তুলনায় কম হবে বলেই আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এর জন্য বীজের গুণগত মান ও আবহাওয়ার প্রতিকূলতাকেই দায়ী করছেন চাষিরা। মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক গৌতম রায় বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার ফলন কম। কৃষকদের কাছে যেটুকু জানা গিয়েছে পেঁয়াজের আকারটাও ছোট হয়েছে এ বার।”
মুর্শিদাবাদে গত বার ৩৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। এ বার সেখানে চাষ হয়েছে ৫৫০০ হেক্টরে। উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয় নওদায়। তারপরেই রয়েছে সাগরদিঘি, বহরমপুর, বেলডাঙা, হরিহরপাড়ার মতো এলাকাগুলি।
বটুকনাথপুরের আকবর মণ্ডল জানান, প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ চাষে খরচ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক বিঘায় ভাল চাষ হলে ৩০ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন হয়। কিন্তু এ বার অতটা ফলন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
চাষিদের মতে ফলন কম হওয়ার অন্যতম কারণ, এ বার বর্ষা দীর্ঘ দিন চলায় ফসল লাগাতে দেরি হয়েছে, সময় কম মিলেছে তাই। চাষের প্রথমাবস্থায় কুয়াশা ও তাপমাত্রার ওঠা-পড়া ক্ষতি করেছে পেঁয়াজের ফলনে। এ ছাড়াও একই প্রজাতির বীজ প্রতি বছর রোপণ করায় গুণগত মান কমছে। গাছে পোকার আক্রমণ তো আছেই।
নওদার পরেশনাথপুরের কৃষক সুজয় মণ্ডল, আলানাথ সরকার, পুরন সরকাররা বলেন, ‘‘এ বার পেঁয়াজ ফলন গত বারের থেকেও কম। পৌষ ও মাঘ মাসে শীত বাড়া-কমার সঙ্গে কুয়াশার প্রকোপে পেঁয়াজ গাছে রোগপোকার আক্রমণ বাড়িয়েছে। আমরা প্রপিকনাজল, স্প্রিন্ট ও ন্যাটিভ সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করেছিলাম কৃষি দফতরের পরামর্শে। তাই জমিতে কিছুটা ফসল দেখতে পেলাম।”
বেলডাঙার নারায়ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘অগ্রহায়ন মাসে পেঁয়াজ লাগিয়ে চৈত্র মাসে ফসল উঠছে। ফসল তুলতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ফল খুব ছোট এবং গুণগত মান খারাপ।” হরিহরপাড়ার খুরশিদ আলি আবার কার্তিক মাসের শেষের দিকে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন। তখন এমন বৃষ্টি হয়েছে যে প্রথমেই প্রচুর ক্ষতি হয়ে যায়। পরে রোগ পোকার আক্রমণে গাছ ভাল হয়নি, ফলন খুবই কম।
এখন পেঁয়াজ তোলার মরসুম। মাঠে পেঁয়াজ গাছ কেটে বাড়িতে এনে আলাদা করতে হয় প্রথমে। এরপর বস্তাবন্দি করে বাজারে পাঠাতে হয়। এবার প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি ৭৫০ টাকা দরে। বহরমপুরের কৃষক প্রশান্ত মণ্ডলের কথায়, “লাভ-ক্ষতির হিসাব বুঝে উঠতে সময় লাগবে।”