খুনের মামলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির নাম জড়িয়ে দিয়ে ‘ঘোরতর ভুল’ করেছে তৃণমূল, মন্তব্য হুমায়ুন কবীরের।
শাসকদলের মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যকরী সভাপতি মনে করেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পাশাপাশি রেলপ্রতিমন্ত্রীর দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অধীর। কথা নেই বার্তা নেই ঘাট দখলের একটা সামান্য খুনের ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়া রাজনৈতিক মুর্খামির পরিচয়। এর ফলে প্রদেশ সভাপতি তথা কংগ্রেসের মাথাতেই সহানুভূতির পালক গুঁজে দেওয়া হল।”
এখানেই থামছেন না। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর অভিযোগ, “অধীর চৌধুরীকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসাতে গিয়ে বারে বারেই মুখ পুড়েছে দলের। বহরমপুরে কামাল শেখ খুনের ক্ষেত্রেও তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়া হল ঘটনার দেড় বছর পরে। সে বারও চার্জশিটে অধীরের নাম জুড়ে বেকাদায় পড়েছিল দল। আগাম জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি।”
দলের ‘অপরিণত’ এক শ্রেণির নেতা এবং পুলিশ-প্রশাসনের কিছু ‘কর্তাভজা’ কর্মী শাসকদলকে ‘খুশি’ করতে গিয়ে বারংবার এই ‘অধীর-ফাঁদে’ পা দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি তিনি, ‘অপরিণত’ এই সব কাজে তিনি নিজে বাধা দিচ্ছেন না কেন?
“আমার কথা শুনলে তো!”
স্পষ্টই বিষণ্ণ শোনায় রেজিনগরের প্রাক্তন বিধায়কের গলা।
তবে হুমায়ুনের এই মন্তব্যে খুশি হয়েছেন একদা তাঁর রাজনৈতিক গুরু অধীর চৌধুরী। শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে জনসভা সেরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “খুশি হলাম। দেরিতে হলেও কারও যদি শুভবুদ্ধি জাগে ভাল তো।” যা থেকে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, পুরনো দলে প্রত্যাবর্তনের রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি। তবে সে কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, “না, প্রশ্নই নেই।” অধীরেরও সংক্ষিপ্ত জবাব, “কোনও সম্ভাবনা নেই।”
জলঙ্গির পরাশপুর চরে একটি ঘাটের দখলকে ঘিরে বুধবার দুই গোষ্ঠীর বিবাদে খুন হয়েছিলেন বাদল শেখ নামে এক যুবক। তাঁকে দলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছিল শাসকদল। অভিযুক্ত ২৮ জনের তালিকায় শেষ নামটি ছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর।
শুক্রবার এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ জেলা জজ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেন অধীর। বিচারক তা গ্রহণ করেন। যত দিন না ওই আগাম জামিনের শুনানি হচ্ছে, তত দিন অন্তর্বর্তিকালীন জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। দু’পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পরে ১৬ এপ্রিল চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারক।
লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের একটি আসনেও প্রার্থী হতে না পেরে হতাশ হুমায়ুন প্রশ্ন তুলেছিলেন, কংগ্রেসের খাসতালুকে তৃণমূলকে বিকল্প শক্তি হিসেবে চিনিয়ে দেওয়ার পরেও শাসকদল তাঁকে যোগ্য না মনে করলে ‘সে দলে থেকেই বা লাভ কী!’ তবে, অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে নয়, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তৃণমূলে াপ্য সম্মান না পেলে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নেবেন।
কিন্তু এক সময়ে তৃণমূলনেত্রীর ঘোর ‘আস্থাভাজন’ হুমায়ুন টিকিট পেলেন না কেন? তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের দাবি, “জেলা কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা হুমায়ুনের কাছে প্রস্তাব দিচ্ছিলেন কোনও ভাবেই তিনি যেন বহরমপুরে অধীরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজি না হন।” পুরনো দলের নেতাদের সঙ্গে ঘন ঘন এই যোগাযোগ ভাল চোখে দেখেননি জেলা নেতাদের একাংশ। দলের শীর্ষ নেতাদের এ ব্যাপারে তাঁরাই ‘কান ভারী’ করেন বলেও হুমায়ুন ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ। তার জেরেই শেষ পর্যন্ত আর টিকিট মেলেনি হুমায়ুনের। বহরমপুরে প্রার্থী করা হয় গায়ক ইন্দ্রনীল সেন’কে।
এ দিন তাঁকেও সতর্ক করে দিয়েছেন হুমায়ুন। তাঁর স্পষ্ট কথা, প্রার্থীকে আরও ‘খাটতে হবে’। হুমায়ুনের কটাক্ষ, “বহরমপুর কেন্দ্রটা তো শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মুর্শিদাবাদের ধুলো-মাটিতে নেমে গাঁ-গঞ্জে না ঘুরলে অধীরের বিরুদ্ধে লড়াই দেওয়া যায়?”