রাতের অন্ধকারে ক্রেতা সেজে গাঁজা বিক্রেতা এক মহিলাকে ধরলেন নদিয়া জেলা প্রশাসনের দুই আধিকারিক। শুক্রবার রাতে জেলা সদর হাসপাতালের পিছনে পাঁচিলের গায়ে ছোট্ট বেড়ার দোকানে অতিরিক্ত জেলাশাসক উৎপল ভদ্র ও জেলার অন্যতম ম্যাজিস্ট্রেট শুভব্রত মণ্ডল যখন গাঁজার দরদাম করছিলেন, তখন অবশ্য ঘুুণাক্ষরেও টের পাননি গাঁজার ওই কারবারি। টের পেয়ে যখন পালাতে গেলেন, ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন জেলার আবগারি দফতরের সুপার দীপক কুমার নাহা। সঙ্গে কোতোয়ালি থানার বেশ কিছু মহিলা পুলিশকর্মী। সন্ধায় ব্যস্ত রাস্তায় এভাবে পুলিশ আর সরকারি গাড়ির ভিড় দেখে কৌতুহলে দাঁড়িয়ে যান পথচলতি মানুষজন। বিপদ বুঝে নগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা ধৃত ওই মহিলা অতিরিক্ত জেলাশাসককে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘‘আমি প্রতি মাসে আবগারি দফতরের ভট্টাচার্য আর থানার গোপালকে টাকা দিই। তার পরেও কেন আমাকে ধরা হবে?’’ তাঁর এই পাল্টা প্রশ্ন শুনে ভিড়ের ভিতরে শুরু হয়ে যায় ফিসফিসানি। ভিড়ের ভিতর থেকে উড়ে আসে প্রশ্ন, ‘‘এই মহিলা তো চুনোপুঁটি। রাঘব বোয়ালদের ধরবে কবে?’’ পরে উৎপলবাবু বলেন, ‘‘আমরা ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে চিহ্নিত করব। প্রয়োজনে ওই মহিলাকে দিয়ে শনাক্ত করা হবে। তারপর তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শুক্রবার রাতেই একটি দল হানা দেয় ওই মহিলার বাড়িতে। সেখান থেকেও উদ্ধার হয় বেশ কিছু গাঁজা। এরপর শুভব্রতবাবুকে সঙ্গে নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক যান ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দিকে। পিছনে আবগারি দফতরের সুপারের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী। জাতীয় সড়ক ধরে গাড়ি ছুটল বাহাদুরপুরের দিকে। বাহাদুরপুর ফরেস্টের উল্টো দিকে জাতীয় সড়কের পাশে প্রায় অন্ধকার এক ধাবার সামনে আচমকা দাঁড়িয়ে গেল অতিরিক্ত জেলাশাসকের গাড়ি। বিপদ আঁচ করে হুড়মুড়িয়ে জঙ্গলের ভিতরে সেঁধিয়ে গেল একাধিক ছায়ামূর্তি। ফাঁকা ধাবায় তল্লাশি চালিয়ে মিলল কিছু বাংলা মদের বোতল। তল্লাশি চলল পরের ধাবাতেও। সেখানেও মিলল কিছু। এই ভাবে লাইন দিয়ে একের পর ধাবায় অভিযান চলতে থাকে। মুহুর্তের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফাঁকা হয়ে যায় অন্য ধাবাগুলি। উনুনের উপরে লোহার চাটুতে পুড়তে থাকে রুটি, কোথাও বা পাঁপড়। গোটা পাঁচেক ‘লাইনের হোটেলে’ অভিযান চালিয়ে এবার গাড়ি ছোটে ধুবুলিয়ার দিকে। সেখানে একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে মেলে সামান্য কিছু বিলিতি মদ আর বিয়ার। হতাশ হয়ে সকলে যখন গাড়িতে উঠতে যাবে ঠিক সেই সময়ে উৎপলবাবুর চোখ পড়ে বাইরে থেকে তালা দেওয়া শৌচাগারের দিকে। সন্দেহ হওয়ায় তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। ম্যানেজারকে ডেকে খোলা হয় দরজা। খুলতেই সকলের চোখ চড়কগাছ। ভিতরে পেটি পেটি বিয়ার আর বিলিতি মদ। ম্যানেজারের হাজার অনুরোধেও চিড়ে ভেজে না। সবকটি পেটি একে একে তুলে গাড়ি ছোটে সামনের দিকে। আরও একটি হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকেও উদ্ধার হয় বেশ কিছু মদ। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘আমাদের কাছে দীর্ঘ দিন ধরেই খবর আসছিল যে শহরের ভিতরে প্রকাশ্য গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। সেই মতো একটি নির্দিষ্ট সূত্র থেকে খবর পেয়ে ওই মহিলার দোকানে হানা দিয়ে হাতে-নাতে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় সড়কের পাশের লাইন হোটেলগুলোতেও হানা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও বেশ কিছু দিশি ও বিলিতি মদ উদ্ধার হয়েছে।”