কারবালার মাঠে আক্রমণাত্মক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
‘চ্যালেঞ্জ’ ছিলই। কিছুদিন আগেই কৃষ্ণনগরের কারবালার মাঠে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সভায় উপচে পড়ছিল ভিড়। রবিবার নদিয়ার জেলাসদরের জনতা নিরাশ করল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও সন্ধ্যায় মাঠে ভিড় ছিল দেখার মতো। সেদিকে তাকিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখাল তৃণমূল নেত্রীকে। প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে গলা খুলে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করলেন তিনি। তার আগে রানাঘাটের স্বাস্থ্যোন্নতি ময়দানে মিনিট পঞ্চাশের বক্তব্যেও আক্রমণের তির ছিল মোদীর দিকে। কখনও সরাসরি বললেন, “এই লোকটা খুনী। জামায় রক্ত, মুখে রক্ত, চুল থেকে নখ পর্যন্ত রক্ত। বলছে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। যিনি ধর্মনিরপেক্ষতা মানেন না, তিনি হবেন প্রধানমন্ত্রী। চ্যালেঞ্জ করছি উনি প্রধানমন্ত্রী হবেন না।” আবার কখনও বললেন, “আপনি আমার রাজ্যে এসেছেন। অতিথির মর্যাদা দেব। কিন্তু দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করলে আইনের ব্যবস্থা নেব।” বাংলাদেশীদের নিয়ে সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মোদীর বিরুদ্ধে ‘জাতিদাঙ্গা বাধানো’র অভিযোগ তুলে গ্রেফতার করার দাবি পর্যন্ত তুললেন কৃষ্ণনগরের সভায়।
পাশাপাশি ভাষণের মাঝে গুজরাতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনাও বারেবারে টেনে আনেন মমতা। রানঘাটের সভায় যেমন বলেন, “গুজরাতের চকচকেবাবু, তোমার ওখানে রেভিনিউ বাবদ কত টাকা আয় হয়? শতকরা ১৫ ভাগ। আর এখানে শতকরা ৩১ ভাগ। গুজরাতের চেয়ে সাধারণ মানুষের জন্য এ রাজ্যে বেশি কাজ হয়েছে। একশো দিনের কাজে সেখানে মাত্র পাঁচশো কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আর এখানে ৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। নির্লজ্জরা বাংলার কথা বলবে না। হিংসায় ভাল কথা বলে না।” সংসদে ক্ষমতা বোঝাতে গুজরাতের ২৮টি আসন আর পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের তুলনা করেন মমতা।
সারদা প্রসঙ্গও আসে মমতার বক্তব্যে। রানাঘাটে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ রাজ্যে ১৯৮০ সাল থেকে চিট-ফান্ড চলছে। সেই সময় সিপিএম ক্ষমতায় ছিল। সেই সময় থেকে ২০১১ সাল অর্থাত্ আমরা এই রাজ্যের ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত কী হয়েছে? কেন্দ্র কী করেছে? দিল্লিতে বিজেপি-ও ছ’বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা কী করেছিল? এখন সব মনে পড়েছে। নির্বাচনের সময় ইডি কাজ শুরু করেছে। সব প্রশ্নের জবাব দেবে মানুষ।”
অন্য দিনের মতো এ দিনও নেতাই থেকে শুরু করে সিঙ্গুরে তাপসী মালিকের হত্যাকাণ্ড, নন্দীগ্রাম, জ্ঞানেশ্বরী মামলার উল্লেখ করে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষ করেন মমতা।
তুলনায় কমই এ রাজ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস বা সিপিএমকে বেঁধেন তিনি। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় ছড়া কেটে অবশ্য বলতে শোনা যায়, “সিপিএম আগে বলত, মার্ক্স, লেনিন, হো-চি-মিন/ এখন বলে বিজেপি দাদা একটু ভোটটা কেটে দিন।”
কারবালার মাঠে সভা শেষে নদিয়ার জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘যা ভিড় হয়েছে তাতে আমরা একশ শতাংশ খুশি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সভার থেকে দ্বিগুন ভিড় হয়েছে আজকের সভায়।’’ যদিও তৃণমূলের এই দাবি মানতে রাজি নয় সিপিএম। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘যাঁরা বলছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সভার থেকে বেশি ভিড় হয়েছে, তাঁরা আসলে জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। তাঁদের নেত্রী তো বক্তব্য রাখতে ওঠার কিছু সময় পর থেকেই মানুষ মাঠ ছাড়তে শুরু করেছিল।’’
বস্তুত এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে ওঠার কিছু পরই ঝোড়ো বাতাস বইতে থাকে। মমতা তখন সামান্য থেমে এমনও বলেছিলেন, “চাইলে আপনারা চলে যেতে পারেন।” তবে, ঝোড়ো বাতাসের দাপটে জনতার উত্সাহে ভাটা পড়েনি মোটেই।