লোকসভা ভোটে তেমন কোনও সংগঠন ছাড়াই নদিয়া জেলায় প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। সেই শুরু। তারপর থেকে রীতিমতো হিসেব কষে নদিয়ায় সংগঠন তৈরিতে মন দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি চলছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। গত লোকসভা ভোটের পর থেকেই জেলা জুড়ে নানা ধরনের শিবির এবং কর্মশালার আয়োজন করেছে বিজেপি। কৃষ্ণগঞ্জ উপ নির্বাচনের আগে আগে তাদের সংযোজন বিশেষ বুথ রক্ষা কমিটি।
বিজেপির নদিয়া জেলার মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “লোকসভা ভোটের পর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জেলায় আমাদের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে চল্লিশ হাজার। নভেম্বরের পর থেকে দ্বিতীয় দফায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। মোট হিসেব তারপরেই বলা সম্ভব হবে। তবে লোকসভা ভোটের সময় জেলায় আমরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও বহু জায়গায় আমাদের সংগঠনই ছিল না।”
সৈকতবাবু জানান, এখন নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগরের মতো শহরগুলির প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিটি বুথে বিজেপির কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কৃষ্ণনগরে গত পুরভোটে বিজেপি যেখানে ১৯টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়ে সাকুল্যে পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছিল, সেখানে লোকসভা ভোটে ১৫৮০০ ভোটে এগিয়ে ছিল। কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপ নির্বাচনের একমাস আগেই তাঁরা এলাকার ২৮৮টি বুথেই বুথ কমিটি তৈরি করে ফেলেছেন।
সম্প্রতি ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখল করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন অপর্ণা বাগ নামে স্থানীয় এক মহিলা। ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল তৃণমূলের। তারপর কৃষ্ণগঞ্জের মানুষের সমর্থন অনেকটাই খুইয়েছে রাজ্যের শাসক দল। সেই সমর্থন নিজেদের দিকে টানতে প্রথম থেকেই উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি। কৃষ্ণগঞ্জের আসন্ন উপ নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিজেপির রাজ্য এবং নদিয়া জেলা নেতৃত্ব বিশেষ এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় এসে রাজ্যে তৃণমূলকে ঠেকাতে বুথে বুথে বিশেষ বুথ রক্ষা কমিটি গড়তে বলেছিলেন। সেই পরামর্শ মাথায় রেখে কৃষ্ণগঞ্জের ২৮৮টি বুথে বুথরক্ষা কমিটি গড়ল বিজেপি। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের দাবি, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষে বুথ ভিত্তিক এই ধরনের কমিটি এই প্রথম তৈরি করা হল। হাঁসখালি এবং কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক নিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা। এরমধ্যে হাঁসখালি ব্লকে ৮টি এবং কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে মোট বুথের সংখ্যা ২৮৮টি। প্রতিটি বুথেই তৈরি হয়ে গিয়েছে বুথ রক্ষা কমিটি।
এই বুথ রক্ষা কমিটির কাজ কি? বিজেপির নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী জানান, ভারতের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার যেমন আছে, তেমনি আছে অবাধ ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা। কিন্তু এ রাজ্যের বর্তমান শাসক দল সন্ত্রাসের আবহাওয়ায় ভোট করাতে পছন্দ করেন। মানুষকে তৃণমূল যাতে ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস করে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটে কোনও বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সেটা দেখাই হবে বুথ রক্ষা কমিটির কাজ। কল্যাণবাবু বলেন, “আমরা মনে করি নির্বিঘ্নে ভোট করানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলেরও একটি বিশেষ ভুমিকা থাকে। বিজেপির বুথ রক্ষা কমিটি সেই কাজটিই করবে।”
কী ভাবে কাজ করবে এই কমিটি? সৈকতবাবু বলছেন, “প্রতিটি বুথ রক্ষা কমিটির কাজ হবে সংশ্লিষ্ট বুথের প্রতিটি ভোটার অবাধে ভোট দিতে পারছেন কি না, অন্য কোনও রাজনৈতিক দল ভোটারকে অহেতুক হয়রানি করছে কি না এই সব দেখা। সমস্যা তৈরি হলে শান্তিপূর্ণ এবং অহিংস ভাবে তার মোকাবিলা করা। কোনও প্ররোচনায় যাতে কেউ পা না দেন , তাঁকে সাবধান করা হবে। তবে আক্রমণ হলে বুথ রক্ষা কমিটি অবশ্যই প্রতিরোধ করবে।”
কৃষ্ণগঞ্জের উপ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছেন, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার দু’টি ব্লকের মোট ১৫টি পঞ্চায়েতের জন্য থাকছে ১৫টি পৃথক কমিটি। এক একটি কমিটিতে থাকবেন পাঁচ জন করে কার্যকর্তা। অন্য দিকে নতুন এই বুথ রক্ষা কমিটির প্রতিটিতে গড়ে ১৫ জন করে সদস্য থাকবেন। পাঁচটি করে বুথ রক্ষা কমিটির জন্য একজন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন। সঙ্গে থাকছেন জেলা কমিটি, রাজ্য কমিটির সদস্যরা।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কৃষ্ণগঞ্জে ২৮৮টি বুথ রক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করেছিল বিজেপি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য নেতা শিশির বাজোরিয়া। ওই কর্মশালায় চারশো জন উপস্থিত ছিলেন। সে দিনের কর্মশালায় যোগ দেওয়া ঘুগড়াগাছি পঞ্চায়েতের ৬১ নম্বর বুথের সভাপতি স্বপন প্রামাণিক, ময়ূরহাট ১৮৫ নম্বর বুথের সভাপতি গোবিন্দনাথ ঘোষদের কথায়, “সাংগঠনিক দুর্বলতা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। আমার এখন জানি কী ভাবে স্থানীয় ইস্যুকে ধরে ভোটের প্রচার করতে হয়। একটা সময় ছিল যখন হাঁসখালি, কৃষ্ণগঞ্জে বিজেপির মিটিং-মিছিলে গেলেই মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটত। তবে এখন সময় পাল্টেছে।”