মাতৃসদন থেকে ‘চুরি’ যাওয়া সদ্যোজাত শিশুকন্যা উদ্ধার হল তিনদিন পর। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগ থেকে এক সদ্যোজাত শিশুকন্যা নিখোঁজ হয়ে যায়। নওদা এলাকার এক মহিলা ওই সদ্যোজাতকে হাসপাতালের বিছানা থেকে তুলে নিয়ে আসেন বলে জানা গিয়েছে। শনিবার পুলিশ ওই মহিলাকে জেরাও করে। কিন্তু মহিলা ওই সদ্যোজাতকে নিজের সন্তান বলে দাবি করেন। রবিবার অবশ্য শিশুচুরির কথা স্বীকার করেন তিনি। তারপরেই আকলেমা বিবি নামে ওই মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সদ্যোজাতের পরিবার বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও শিশু নিখোঁজের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ে। নওদা থানার ওসি উৎপল দাস বলেন, “শনিবার বিষয়টি জানার পরেই ওই মহিলাকে জেরা করা হয়। প্রথমে স্বীকার না করলেও পরে জেরার মুখে ভেঙে পড়েন। তাঁকে গ্রেফতার করে বহরমপুর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
জানা গিয়েছে, নওদা শ্যামনগরের বাসিন্দা আকলেমা বিবির তিনটে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মারা গিয়েছে। ঘটনার দু’দিন আগেও তাঁর একটি সন্তান নষ্ট হয়েছে। সে কারণেই আকলেমা বিবি মাতৃসদনে ভর্তি ছিলেন। আকলেমা বিবি জেরার মুখে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পর পর দুটো সন্তান নষ্ট হওয়ার পরে তৃতীয় সন্তান নষ্ট হয়ে গেলে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন যদি তাকে গ্রহণ না করে, তাই ওই শিশুকন্যাকে চুরি করে নিজের সন্তান বলে চালানোর কথা ভেবেছিলেন।
শিশুটিকে নিয়ে আকলেমা শ্যামনগরে বাপের বাড়িতে যান। সেখানে গ্রামবাসীদেরও নিজের সন্তান বলেই জানান। এ দিকে ওই সদ্যোজাতের প্রকৃত বাবা মা টিঙ্কুদেবী ও প্রদীপ হালদারও বিষয়টি জানতে পারেন। এর পরেই খবর যায় নওদা থানার পুলিশের কাছে।
শনিবার আকলেমা পুলিশকে জানান, নওদা থেকে বহরমপুর যাওয়ার পথে রাস্তায় প্রসব হয়। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে ডিএনএ টেস্ট করা হবে বলে জানানো হয়। স্থানীয় সিভিক পুলিশও ওই পরিবারের উপরে নজর রাখছিল। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে কথা স্বীকার করেন ওই মহিলা।
নওদা রতনপুরের বাসিন্দা টিঙ্কু হালদারকে বুধবার সকালে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন দুপুরেই শিশুকন্যার জন্ম হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুকন্যা-সহ তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। তার আগে সদ্যোজাতকে টীকা-পোলিও খাওয়ানো হয়। বিছানায় সদ্যোজাতকে রেখে ছুটির কাগজ আনতে যান টিঙ্কুদেবী। ফিরে আর মেয়েকে দেখতে পাননি।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শিশু চুরির ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে আগামী বৃহস্পতিবার রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।”
ঘটনায় এসইউসিআই এবং কংগ্রেস পৃথক ভাবে সুপার এবং সিএমওএইচের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। একটি বেসরকারি সংস্থাও সুপারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। সংস্থার জেলা সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, “ওই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছি। সেই সঙ্গে হাসপাতালে যে দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে তাও বন্ধ করা ও হাসপাতালের রোগীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে ওই স্মারকলিপিতে।”