Delhi Violence

ছেলেরা ফিরল ঘরে!

সন্ধে ফুরিয়ে অন্ধকার নেমেছে গ্রামের সরু রাস্তায়। কিন্তু আর পাঁচটা রাতের মতো নিঝুম নয় নেহারিতলা।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

নেহারিতলা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৪
Share:

হাওড়া স্টেশনে আলমগির শেখ ও সাফারুল শেখ পৌঁছনোর পর তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা মা মমতাজ বেওয়ার (বাঁদিকে)। সন্ধ্যায় বাড়িতে ঢুকে মেয়েকে আদর ইমামুল শেখের। ছবি: মফিদুল ইসলাম

শেষতক ঘরে ফিরলেন ওঁরা।

Advertisement

সন্ধে ফুরিয়ে অন্ধকার নেমেছে গ্রামের সরু রাস্তায়। কিন্তু আর পাঁচটা রাতের মতো নিঝুম নয় নেহারিতলা। শুক্রবারের মাঝ সন্ধে যেন অন্যরকম, ইতিউতি জটলা, মালা হাতে অপেক্ষা, হাসির রোল— ছেলেরা বাড়ি ফিরবে!

দু’-এক জন অতি উৎসাহী যুবক, গ্রামের নিভু নিভু ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়েছে টুনি আলো। প্রশাসনের কর্তাদের জিপ অহরহ ধুলো ওড়াচ্ছে গ্রামের রাস্তায়। সেই টান টান অপেক্ষার মাঝে, এ দিন রাত আটটা নাগাদ নেহারিতলা পৌঁছল কয়েকটি গাড়ি। দরজা খুলতেই কান্না আর খুশির হল্লা, একে একে নেমে এলেন দিল্লির জাফরাবাদের এক চিলতে ঘরে আটকে থাকা এগারো যুবক।

Advertisement

রুজির টানে দিল্লিতে ওঁরা বেশ কয়েক বছর। তারই মাঝে গত কয়েক দিনে শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠলে চেনা মহল্লা ছেড়ে ওঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন পড়শি পাড়ায়। কিন্তু আড়াই দিন সেখানে কোনও খাবার জোটেনি। সে কথা সামনে আসতেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। প্রশাসনের উদ্যোগে শেষতক সেই এগারো জন এ দিন রাতে ফিরলেন নিজের গ্রামে।

কম ওয়াটের আলোয় সকলের মুখ চেনা দায়। পরিবারের অনেকেই হাতে সস্তার মালা নিয়ে গ্রামের
রাস্তায় হা পিত্যেশ করে বসে আছেন। সেই নিঝুম অপেক্ষাই উল্লাসে ফেটে পড়ল গাড়ি দু’টো গ্রামে ঢুকতেই— ‘এইসছে গো!’

সকালে, সাড়ে দশটা নাগাদ কালকা মেল হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতেই তাঁদের গাড়ি করে গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা করে প্রশাসন। কিন্তু রাস্তা যে বড় লম্বা। গাড়ির মধ্যেই ঘনঘন ফোন আসতে থাকে মহম্মদ কালামের মা খোরশেদা বিবির, সাদ্দামের মা হালিমা বেওয়ার, ইমামুলের স্ত্রী চায়না খাতুনের। গাড়ি থেকে নেমেই মার কোল থেকে ছ’মাসের মেয়ে সারমিনাকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকেন ইমামুল। সাফারুলকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা
মমতাজ বেওয়া।

ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরছে, এ কথা জানতে পেরেই গ্রামে যেন উৎসব লেগে যায়।

এ দিন সব বাড়িতেই ভাল-মন্দ রান্নার গন্ধ। কারও উনুনে সিমের চচ্চড়ি কারও মুরগির মাংস— যে যেমন ভালবাসে। আলমগির ও সাফারুলের মা মমতাজ বেওয়া দুই ছেলের জন্য এ দিন রান্না করেছেন কষা মাংস, ভাত, ডাল, শাক আর ও সিমের তরকারি। তিনি বলেন, ‘‘মনে হল কত দিন পরে রান্না করলাম!’’

ইমামুলের মা মাহেলা বিবি ছেলের জন্য রেঁধেছেন মাংস, ভাত, লাল শাক, আর টোম্যাটোর চাটনি। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেরা খেলে যেন মন জুড়িয়ে যায়!’’ আওলাদ ও হালিম শেখের মা আরফাতন বিবি বলেন, ‘‘ছেলেদের দুর্দশার কথা ভেবে পাঁচ দিন ধরে খাওয়া দাওয়া ভুলে গিয়েছিলাম। দুই ছেলে ঘরে ফিরেছে, এটাই বড় খুশির খবর।’’এ দিন খেতের কাজে না গিয়ে দিনভর গ্রামের মোড়ে, চায়ের দোকানের মাচায় বন্ধুদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সুজাউদ্দিন শেখ, ইনসারুল শেখ, রাজেশ শেখ। তিন দিন কাজের জায়গায় আটকে থাকার পর বড়ভাই বাড়ি ফিরছে। সেই খবর পেয়েই শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে এসেছে মহম্মদ কালামের দুই বিবাহিত বোন জেসমিন খাতুন ও সেলিনা খাতুন। দুই ভাই বাড়িতে আসার খবর পেয়ে এ দিন স্কুল কামাই করে বাড়িতে অপেক্ষায় ছিল আওলাদ শেখ ও হালিম শেখের বোন ক্লাস টেনের পড়ুয়া জুলেখা খাতুন।

প্রশাসনের পাশাপাশি গ্রামের মানুষ ভুলছেন না বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর কথাও— ‘মানুষটা ভোর রাতে ছেলেগুলোকে স্টেশনে তুলতে এসেছিল তো!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement