জলের অপচয় রুখতে অভিযান তরুণদের 

বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেল, ঝোলায় করে একটা রেঞ্জ, আঠা, ছেঁড়া কাপড়, গোটা কয়েক ট্যাপকলের মুখ, সকেট আর পোস্টার নিয়ে বাইকে করে ঘুরছেন জনাকয়েক যুবক।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

সারানো হচ্ছে কল। নিজস্ব চিত্র

চেন্নাইয়ের জলসঙ্কটের খবর পৌঁছে গিয়েছে হলিউড অভিনেতার কাছে। স্বয়ং ‘টাইটানিক’এর অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। হয়তো সে খবর পৌঁছে গিয়েছে শান্তিপুরে জলরক্ষায় ময়দানে নামা ওই যুবকদের কানেও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেল, ঝোলায় করে একটা রেঞ্জ, আঠা, ছেঁড়া কাপড়, গোটা কয়েক ট্যাপকলের মুখ, সকেট আর পোস্টার নিয়ে বাইকে করে ঘুরছেন জনাকয়েক যুবক। শান্তিপুরের অলিগলিতে। আর রাস্তার ধারে ট্যাপকলের খোলা মুখ দেখলেই ঝোলা থেকে কলের মুখ বের করে লাগিয়ে দিচ্ছেন। তার পর কলের কাছে ‘জল অপচয় বন্ধ করুন’ লেখা পোস্টার আটকে চলে যাচ্ছেন অন্য কলের সন্ধানে।

এই দলের বেশির ভাগ সদস্যই কলেজ পড়ুয়া। দলের এক সদস্য শান্তিপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শংকর দাস বলেন, ‘‘সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে জলসঙ্কট। আর আমাদের চারপাশে পথে-ঘাটে ট্যাপকলের খোলা মুখগুলো থেকে অঝোরে ঝরছে জল। তাই আমরা কয়েক জন মিলে ঠিক করি আমাদের সাধ্যমতো জল অপচয়ের বিরুদ্ধে প্রচার করব।’’

Advertisement

যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ট্যাপকলের খোলা মুখগুলোয় মুখ লাগিয়ে জলের অপচয় বন্ধের চেষ্টা করা হবে স্থির হয়। সেই মাফিক, ফেসবুক আর হোয়াটসআপে তাঁদের প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন জানান ওঁরা। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক ওই দলে সদস্য সংখ্যা ১২। প্রতি বৃহস্পতিবার আর রবিবার দলটি কলের মুখ লাগানোর কাজ করে থাকে। দলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অভিযান’।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিপুরে রাস্তার ধারে কম-বেশি প্রায় ২০০-র মতো ট্যাপকল আছে। যার বেশির ভাগেরই মুখ নেই। পুরসভা থেকে মাঝে মাঝে কলের মুখ লাগিয়ে দেওয়া হলেও কিছু দিন পরই কেউ বা কারা তা ভেঙে দেয়। আগে বেশির ভাগ কলের মুখ পিতল বা লোহার হত, সেগুলি ভেঙে বিক্রি করলে কিছু পয়সা মিলত বলে চুরি যেত। এখন বেশির ভাগ কলের মুখই প্লাস্টিকের, তা-ও কেন এমন হচ্ছে?

এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে বোঝা গেল সমস্যা মূলত তিনটি। এক, রাতবিরেতে এলাকার দুষ্টু ছেলেরা নিছক মজা করে কলের মাথা ভেঙে দিয়ে যায়। দুই, জল নেওয়ার সময় কলের মাথা ধরে অনবরত ওঠা বসার কারণে বা ঠিক মতো ব্যবহার না করার ফলে কলের মুখ ভেঙে যায় বা খারাপ হয়ে যায়। তিন, মুখ না থাকলে কলের জলের গতি অনেক বেশি হয়। তাই স্নান করা বা কাপড় কাচায় সুবিধা হয়। এই সব কারণেও কলের মুখ খুলে দেন অনেকে।

হামিদিয়া লেনের আকুল হোসেন যেমন বললেন, ‘‘মোবাইলে দেখছি, জল অপচয় করা বন্ধ না করলে আগামী দিনে নাকি অনেক শহরে জল মিলবে না। বড় রাস্তার ধারে কল। কত লোক যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, কে কখন মুখ ভেঙে দিচ্ছে বোঝা যায় না। এখন যেমন কলে মুখ নেই, সারা দিন জল পড়েই যাচ্ছে।’’

অথচ, ইতিমধ্যেই তীব্র পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement