বিধ্বস্ত: রবিবার ধুবুলিয়ায় নিজের বাড়িতে নিহত দুলাল বৈদ্যের(ইনসেটে) স্ত্রী অর্পিতা বৈদ্য। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন দর্শকাশনে বসা মহিলাদের উত্যক্ত করছিল পাশের গ্রামের এক দল মদ্যপ যুবক। তারই প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। অভিযোগ, তাতেই মারমুখী হয়ে ওঠে মদ্যপেরা। সকলের সামনেই বেধড়ক মারতে শুরু করে দুলাল বৈদ্য নামে বছর ছত্রিশের সেই প্রতিবাদীকে। নেতিয়ে পড়েন তিনি। গত শনিবার গভীর রাতে রানাঘাটের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় দুলালের। ধুবুলিয়ার তাতলা গ্রামের এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে পলতা গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেব ঘোষ-সহ আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ১০ অক্টোবর রাতে তাতলা বাজারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল স্থানীয় এক পুজো কমিটি। দর্শকাসনের এক ধারে ছিল মহিলাদের বসার জায়গা। সেখানে ছিলেন নিহত দুলাল বৈদ্যর স্ত্রী অর্পিতাও। রাত ন’টা নাগাদ পাশের পলতা গ্রাম থেকে কয়েক জন মদ্যপ যুবক এসে মহিলাদের সামনে নাচানাচি, অভব্য আচরণ শুরু করে। তারা মহিলাদের উদ্দেশে অশালীন ইঙ্গিত ও উক্তি করছিল বলেও অভিযোগ। কাছেই ছিলেন দুলাল। তিনি প্রতিবাদ করেন এবং ওই যুবকদের মহিলাদের আসন থেকে সরে গিয়ে নাচতে বলেন। তাই নিয়ে শুরু হয় বচসা। অভিযোগ, আচমকাই ওই যুবকরা দুলালের উপরে চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। উপস্থিত অন্যরা এসে ঠেকানোর আগেই দুলাল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় যুবকরা।
দুলালকে উদ্ধার করে প্রথমে ধুবুলিয়া ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এর পর নীলরতনে রেফার করা হয়। পথে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে রানাঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
লক্ষ্মীপুজোর আগের রাতে দুলালের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে গোটা গ্রাম থম মেরে গিয়েছে। পুজোর যাবতীয় আনন্দ নিভে গিয়েছে। প্রায় তেরো বছর আগে বিয়ে হলেও সন্তান হয়নি দুলালদের। বাড়িতে স্ত্রী ও সত্তর বছরের মা আছেন। দুলাল ধুলাগড়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। পুজো উপলক্ষে বাড়ি এসেছিলেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঝুমা হালদার বলছেন, ‘‘ওরা প্রচুর মদ খেয়েছিল। মানুষটা এসে প্রতিবাদ করে। পাশে সরে যেতে বলে। তখনই ওরা ওঁর স্ত্রী-র সামনেই ওঁকে মারতে থাকে।” দুলালের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে সমানে কেঁদে চলেছেন মা ও স্ত্রী। একনাগাড়ে স্ত্রী অর্পিতা শুধু বলে চলেছেন, “চোখের সামনে ওরা আমার স্বামীকে পিটিয়ে মারল। আমি ওদের চরম শাস্তি চাই।”