টানাটানির সংসার। কিন্তু তাতে কী? রাস্তায় পড়ে থাকা এক লক্ষ টাকা-সমেত একটি ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে, তরুণী তা ফিরিয়ে দিলেন ব্যাগের মালিককে। শনিবার বিকেলে শান্তিপুরের ফুলিয়া মাঠপাড়ার ঘটনা।
বাবা টোটো চালান। তাতে সংসার টেনে দুই ভাইবোনের স্কুল-কলেজের খরচ মেটে না। কন্যাশ্রীর এককালীন ২৫ হাজার টাকাটা হাতে পেতেই তাই পড়াশুনার পাশাপাশি ব্যবসা করার কথা মাথায় আসে তাঁর। সেই মতো মাসখানেক আগে জেরক্স, মোবাইল রিচার্জের দোকান খুলে বসেন শান্তিপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী কুহেলি বসাক।
এ দিনও দোকানেই ছিলেন কুহেলি। হঠাৎই লক্ষ করেন দোকানের সামনে রাস্তায় একটি ব্যাগ পড়ে রয়েছে। পরিচিত আর এক যুবক প্রতুল বসাকও দেখতে পান ব্যাগটি। দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাগটি রেখে দেওয়া হয় কুহেলির দোকানে।
এ দিকের ব্যাগ না পেয়ে হন্যে হয়ে বিভিন্ন দোকানে খোঁজ করছিলেন উজ্জ্বল হালদার। শেষে কুহেলির দোকানেও আসেন তিনি।
এ দিন উজ্জ্বলবাবু বলেন, “বাজার থেকে ফেরার পথে মোটরবাইক থেকে ব্যাগটা পড়ে গিয়েছিল। পরে বিষয়টি জানতে পেরে আমি কুহেলির কাছে এলে আমাকে পুরো টাকা সমেত ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়েছে।”
উজ্জ্বলবাবুর বাড়ি ফুলিয়া লাগোয়া কালীপুরে। তিনি পেশায় তাঁতশিল্পী। বাড়িতে রাজমিস্ত্রি কাজ করছে। তাই শনিবার ফুলিয়াতে তাঁর মহাজনের কাছ থেকে আর ব্যাঙ্ক থেকে কিছু টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সব মিলিয়ে ব্যাগে মোট এক লক্ষ টাকা ছিল। পরে ফুলিয়ায় একটি ওষুধের দোকান থেকে ওষুধও কেনেন। এর পরে দুপুরে মোটরবাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় ফুলিয়া মাঠপাড়ায় কুহেলির দোকানে সামনে ব্যাগটি পড়ে যায়।
কিছু দূর যাওয়ার পর উজ্জ্বলবাবু টের পান, মোটরবাইকের পিছনে ব্যাগ নেই। এর পর সারা দুপুর তিনি ফুলিয়ার বিভিন্ন দোকানে গিয়ে খোঁজ করেন। পরে শনিবার বিকেলে জানতে পারেন কুহেলির দোকানে একটি ব্যাগ রয়েছে। ব্যাগে কী কী রয়েছে বলতেই কুহেলি টাকা সমেত ব্যাগ উজ্জ্বলবাবুর হাতে তুলে দেন। উজ্বলবাবু বলেন, ‘‘টাকাটা না পেলে আমি চরম সমস্যায় পড়তাম।’’
কুহেলির কথায়, “আমার যদি এ রকম হতো, আমিও কষ্ট পেতাম। টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। উনি না এলে থানায় জানাতে হতো।” কুহেলির সততার পরিচয় পেয়ে খুশি হয়ে উজ্জ্বল হালদার তাঁকে এবং প্রতুলবাবুকে দু’হাজার করে মোট চার হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন।