মা-বাবার সঙ্গে রবিউল। — নিজস্ব চিত্র
চাকুলিয়ার হদ্দ গ্রামে চিকিৎসার তেমন সুযোগই ছিল না। কিশোর ছেলেকে নিয়ে তাই পাকুড়ের জাগ্রত কবিরাজের ভরসাতেই ছুটে এসেছিলেন ওঁরা।
বাবা-মা আর সেই ন্যালাভোলা ছেলে।
আর, তার পর সেখান থেকেই হারিয়ে গিয়েছিল সে।
রাস্তায় এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো সেই ছেলের খোঁজ মিলেছিল কৃষ্ণগঞ্জের রাস্তায়। স্থানীয় একটি সংগঠন প্রায় ‘পরিচয়হীন’ ছেলেটিকে তুলে দিয়েছিল একটি সরকারি হোমে।
পথ্য আর চিকিৎসায় সেখানে ক্রমেই সুস্থ হয়ে ওঠা ছেলেটি এক দিন জানিয়েছিল তার নাম— রবিউল ইসলাম। জানিয়েছিল উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার গ্রামে তার ঠিকানার কথাও।
হাতড়ে হাতড়ে সেই ঠিকানা খুঁজে আড়াই বছর পরে মঙ্গলবার সেই রবিউলকেই বাবা-মা’র হাতে তুলে দিল হোম কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ভাটিয়াপাড়ার বাসিন্দা রবিউলেরা। কৃষ্ণনগরের মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “বছর দুয়েক আগে কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ ছেলেটিকে উদ্ধার করে আমার কাছে পাঠিয়েছিল। এ দিন তাঁর বাবা মা এসেছিল। কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ ওর বাবা মাকে শনাক্ত করেছে। তাঁর পরেই রবিউলকে তাঁর বাবা মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
ছেলে ফেরত পেয়ে খুশি বাবা-মা। রবিউলের বাবা তৈয়ব আলি বলছেন, “অনেক খুজেছি, কিন্তু কোনও খোঁজ পায়নি। সাত দিন আগে চাকুলিয়া থেকে আমাদের জানানো হয় ছেলে নদিয়ার একটি হোমে রয়েছে। তার পরে কাগজপত্র নিয়ে সোমবার বিকালে নাকাশিপাড়ায় এসেছি।” মা আরিনা বিবি ছেলেকে কাছে কেঁদেই চলেছেন। চার ছেলে এবং চার মেয়ের মধ্যে রবিউল তৃতীয়। রবিউলের দিনমজুর বাবা বলেন, ‘‘ছেলে খারিজি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো। বছর চারেক আগে থেকে সে কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। বুঝলাম মাথার ব্যামো। পরিচিতদের পরামর্শে তাকে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে এক কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসি। স্টেশন থেকেই হারিয়ে গিয়েছিল সে।’’