মাটি কামড়ে পড়ে থেকে, চোখরাঙানি সহ্য করে কর্মীরা ওঁদের জন্য জান কবুল করেছিলেন। ঠা-ঠা রোদে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছিলেন ভোটারেরা। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আমিনাবাদে দু’টো বুথে তো দু’বার!
এখন জিতে নেতারা জামা পাল্টে তৃণমূলের পায়ে ঝাঁপ দেওয়ায় হতাশ, তার চেয়েও বেশি বিরক্ত জোটের ভোটারেরা। তাঁরা প্রশ্ন করছেন, এউ বেইমানদের ভোচ দিয়ে লাভ কী?
২০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ভুঁইফোড় নন। সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য, পার্টি মেম্বার তো বটেই। মিছিলে-মিটিংয়ে সামনের সারিতে দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু ফল ঘোষণা হওয়ার আগে, শুধু জিতে গিয়েছেন জেনেই দলবদল করে তিনি দলের কফিনে পেরেক মেরেছেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ডে ‘কংগ্রেসের বীরযোদ্ধা’ আসাদুল ইসলামও কম যাননি। তাঁকে দেখিয়ে ডোমকলের কর্মী থেকে নেতারা বলতেন, ‘কংগ্রেস হবে তো এমন হও!’ সেই আসাদুলও গণনাকেন্দ্রেই ঝাঁপ দিয়েছেন সৌমিক হোসেনের পায়ে। এখন তাঁর কথা উঠলেই হাত-আঁকড়ে থাকা কর্মীরা কুঁকড়ে যাচ্ছেন। আসাদুল অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘উন্নয়ন আর শান্তিরক্ষার তাগিদে ওয়ার্ডের প্রতিটি ভোটারের মতামত নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ ভোটের আগে উন্নয়নের কথা মনে পড়েনি? ‘‘ভেবেছিলাম দলের নেতারা আমাদের রক্ষা করবেন, কিন্তু ভোটের পরে তাঁদের ফোনটুকুও পাইনি’’— যুক্তি আসাদুলের।
কংগ্রেসে না হয় আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। কিন্ত সিপিএমের পার্টি মেম্বার ভোটে জিতে অন্য দলে ভিড়ে গেলেন, এমনটা সচরাচর হয় না। রফিকুলের এলাকা জুগিন্দার সিপিএম কর্মী আব্দুর রহমানের কথায়, ‘‘অন্তত মাসখানেক আমাদের ঘুম নেই। পুলিশের ভয়ে মাঠে রাত কাটিয়েছি। গোপনে ভোটারদের বাড়িতে গিয়েছি। বন্দুকের নলের সামনে দাড়িয়ে ভোট করার পরে এমন বেইমানি করলে কি আর নেতাদের প্রতি বিশ্বাস থাকে?’’
রফিকুল অবশ্য ফোন ধরেননি। সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ দাস বলেন, ‘‘রফিকুল আমাদের লজ্জা।’’ দলের ডোমকল জোনাল সম্পাদক রেজাউল হকের বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষ থেকে কর্মীরা রফিকুলের মতো বিশ্বস্ত কর্মীর প্রতি ভরসা রেখেছিলেন। ও আমাদের মুখ পুড়িয়েছে। আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে।’’
জোটের তিন জয়ী প্রার্থীর মধ্যে এক মাত্র ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস নেতা বিল্লাল হোসেনই তৃণমূলে নাম লেখাননি। যদিও তিনি সৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং যথেষ্ট দোনামোনায় ভুগছেন বলে খবর।
তবু আশার খড়কুটো আঁকড়ে ডোমকলে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী শাওনী সিংহ রায় বলেন, ‘‘আসাদুলের মত বেইমান যেমন আছে, বিল্লালেক মতো কর্মীও আছে যারা হাজারো চাপের সামনে মাথা নত না করে এখনও কংগ্রেসের জন্য ভাবে। এরাই আমাদের আশা।’’ ঝড়ের মুখে সেই খড়কুটোও কত ক্ষণ টিঁকবে, সেই সংশয় অবশ্য নিচুতলায় রয়েই গেল।