প্রধানের প্রসব হয়েছিল বাড়িতে

প্রসব বেদনা তো আর বলে কয়ে আসে না। তাই রাতের আঁধারেও গ্রামীণ মানুষকে ছুটতে হয় শহরের প্রসূতি সদনের দিকে— কেন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত উমরাপুর সংলগ্ন ৪টি গ্রামে ৩৭২টি ‘হোম ডেলিভারি’র ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সাহাজাদপুর- উমরাপুরেই হোম ডেলিভারির সংখ্যা ছিল ১৮১।

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

মুর্শিদাবাদে হোম ডেলিভারি অর্থাৎ বাড়িতে প্রসবের পীঠস্থান সুতির দু’টি ব্লক। উমরাপুর ও বহুতালি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই দুই এলাকা ঘুরে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাদের সামনে উঠে এসেছিল প্রসব হার নিয়ে দুই এলাকার এক উদ্বেগজনক চিত্র।

Advertisement

গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত উমরাপুর সংলগ্ন ৪টি গ্রামে ৩৭২টি ‘হোম ডেলিভারি’র ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সাহাজাদপুর- উমরাপুরেই হোম ডেলিভারির সংখ্যা ছিল ১৮১। বাহাগলপুরে ৮২, বাউরিপুনিতে ৫৬ এবং সরলাতে ৫৩টি। সুতি ১ ব্লকের বহুতালিতে গত বছর অক্টোবরে ৫৫টি প্রসবের সব ক’টিই হয়েছিল হোম ডেলিভারি। এঁদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধানও। প্রশাসনের কর্তারা প্রসব স্বাস্থ্যের এই বেহাল দশা দেখে ডেলিভারি পয়েন্ট বাড়িয়ে হোম ডেলিভারি কমানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। এলাকায় আশা ও স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর আশ্বাসও ছিল। দশ মাস পরেও বাস্তবে এর কোনোটাই হয়নি।

উমরাপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একমাত্র এএনএম কর্মী বলছেন, “কিছুই হয়নি। দ্বিতীয় এএনএম নেই, স্বাস্থ্য সুপারভাইজর নেই, ২৫ হাজার জনসংখ্যার জন্য রয়েছেন মাত্র ৬ জন আশা কর্মী। আর নিশ্চয়যান থাকে কিনা জানা নেই। তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ২০ জন শিশুর জন্ম হচ্ছে বাড়িতে।’’

Advertisement

উমরাপুরের এই এলাকা ভৌগোলিক দিক দিয়ে সুতি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র মহেশাইলে, উমরাপুর থেকে যেতে হবে নদী পেরিয়ে ২০ কিলোমিটার। পাশের ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র আহিরণে যেতে হবে ২৫ কিলোমিটার পেরিয়ে নিজের খরচে। কারণ সেখানে সুতি ২ ব্লকের নিশ্চয়যান প্রসুতিদের নিয়ে যাবে না বিনা খরচে। একই ভাবে উমরাপুর থেকে সড়ক পথে চাঁদপুর সেতু হয়ে যাওয়া কিছুটা সহজ শমসেরগঞ্জের অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তাও ২০ কিলোমিটার। কিন্তু ভিন্ন ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হওয়ায় প্রসুতিদের যাতায়াতের ভাড়া মিলবে না।

এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলছেন, “উমরাপুর খুবই পিছিয়ে পড়া এলাকা। যেখানে ৬০০০ জনসংখ্যা পিছু একটি করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা দরকার সেখানে উমরাপুরে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ২০ হাজারে একটা। স্বাস্থ্য ও আশা কর্মীর সংখ্যা এক তৃতীয়াংশেরও কম। ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ২০ কিলোমিটার দূরে। তাই হোম ডেলিভারির এই প্রবণতা ঠেকানো অসম্ভব।” তেমনই হতশ্রী অবস্থা নিয়ে পড়ে রয়েছে বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

সুতির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার বলছেন, “বহুতালি স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালুর সমস্ত পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে ঠিকই। নার্সিং কর্মীও আছেন কিন্তু মিলছে না চিকিৎসক। চিকিৎসক ছাড়া তো মাতৃসদন চালানো যায় না?”

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement