প্রতীকী ছবি।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক তরুণীর। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তাঁর স্বামী।
বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে তেহট্টের বেতাই দক্ষিণ জিতপুর এলাকায়। মৃতার নাম কাকলি সরকার। পরিবার সূত্রে জানা যায়, কাকলির বাড়ি পাশের গ্রামেই। তাঁর স্বামী কৃষ্ণ সরকার কাতারে কাজ করতেন। মাসখানেক আগে বাড়ি এসেছিলেন। তাঁদের ১০ ও ১২ বছরের দু’টি ছেলে রয়েছে।
পরিবারের একটি সূত্রের দাবি, সে রাতে কাকলির বড় ছেলে তাঁর বাপের বাড়িতে ছিল। ছোট ছেলেকে পাশের ঘরে রেখে নিজেদের ঘরের দরজা আটকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগান কাকলি। তার পর জ্বলন্ত অবস্থায় ঘুমন্ত স্বামীকে জাপটে ধরেন। কৃষ্ণ উঠে কোনও রকমে দরজা খুলে উঠোনে বেরিয়ে আসেন। অর্ধেকের বেশি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কৃষ্ণ আপাতত কৃষ্ণনগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
কৃষ্ণর মা ঊষারানি সরকার বলেন, “ছেলে বুধবার রাত ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরে হাত-পা ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুতে চলে যায়। অনেক রাতে চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, ও অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।” তিনি ছুটে গিয়ে জানতে চান, কী হয়েছে। ঊষারানির দাবি, “ছেলে ছটফট করতে করতে বলে, সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল, বৌমা নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে তাকে চেপে ধরে। সে জেগে উঠে পালাতে গেলেও আরও জাপ্টে ধরে বৌমা। কোনও ক্রমে তার হাত ছাড়িয়ে ঘরের দরজা খুলে বাইরে চলে এসেছে।” কেন এই ঘটনা ঘটল, তা অবশ্য তিনি বলতে পারেননি।
প্রতিবেশী মৌটুসি বালা জানান, চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে তিনি ছুটে গিয়ে দেখেন, কৃষ্ণ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বাড়ির উঠোনে পড়ে আছেন। তাঁর কথায়, “ঘরের মধ্যে তখনও দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলছিল কাকলি। ভিজে কাঁথা চাপা দিয়ে আগুন নেভানো হয়।” দু’জনকে তুলে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাকলিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন।
কাকলির বাবা বিশ্বনাথ পান্ডে ও ভাই মানিক অবশ্য তাঁর নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরার কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্বনাথ বলেন, “কিছু দিন ধরেই কৃষ্ণর মেজাজ-মর্জি একটু অন্য রকম ছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নিয়ে আমাদের খটকা আছে। তবে কৃষ্ণ এখন চিকিৎসাধীন। দুটো বাচ্চাও আছে। তাই যা করব, ভেব-চিন্তেই করব।”
খবর পেয়ে বুধবার রাতেই তেহট্ট থানার পুলিশ কৃষ্ণদের বাড়িতে এসেছিল। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। কাকলির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্যপাঠানো হয়েছে।