‘লুঙ্গি ডান্স’ এর তালে দেশ নাচলেও লুঙ্গি পরার চল কমেছে

এত দিন যাঁরা লুঙ্গি পছন্দ করতেন সেই মূলত খেটে খাওয়া মানুষ এখন বারমু়ডা বা সস্তা জিনসে বেশি স্বচ্ছন্দ। যুক্তিও হাজির তাঁদের কাছে। বারমুডা বা জিনসের পকেট রয়েছে। মোবাইল, টাকা-পয়সা রাখা যায়, লুঙ্গিতে সে ব্যবস্থা নেই। তাই ক্রমশ তা ব্রাত্যের তালিকায়। 

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫০
Share:

নবদ্বীপে ক্রমশ বন্ধ হচ্ছে তাঁতকল। তাঁতিপাড়া নিঝুম হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

বলিউডের ‘লুঙ্গি ডান্স’ এর তালে আসমুদ্র ভারতবর্ষ নেচে উঠলেও বাস্তবে লুঙ্গি-প্রিয়তায় ভাঁটার ধাক্কায় দিশেহারা নবদ্বীপের তাঁতিরা।

Advertisement

এত দিন যাঁরা লুঙ্গি পছন্দ করতেন সেই মূলত খেটে খাওয়া মানুষ এখন বারমু়ডা বা সস্তা জিনসে বেশি স্বচ্ছন্দ। যুক্তিও হাজির তাঁদের কাছে।

বারমুডা বা জিনসের পকেট রয়েছে। মোবাইল, টাকা-পয়সা রাখা যায়, লুঙ্গিতে সে ব্যবস্থা নেই। তাই ক্রমশ তা ব্রাত্যের তালিকায়।

Advertisement

অথচ, এত দিন লুঙ্গি ও গামছা বিক্রির উপরে নির্ভর করেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল নবদ্বীপের তাঁতশিল্প। তাঁতিদের অর্থনীতির পালে বাতাস লেগেছিল পাওয়ারলুমের কল্যাণে। তখন আটের দশকের শেষ, নয়ের দশকের শুরু। প্রধানত লুঙ্গির কল্যাণে তখন রমরম করছে তাঁতিপাড়া।

এখন সেখানে প্রায়ান্ধকর। একটু একটু করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁতের টানা-পোড়েন। মাকুর খটাখট শব্দ আর তেমন শোনা যায় না নবদ্বীপ ও সংলগ্ন অঞ্চলে। তিন পুরুষ ধরে তাঁতির কাজ করে আসার পর বর্তমান প্রজন্ম কাপড় বোনার যন্ত্র বেচে রিকশা কিনছে, লটারি টিকিট বিক্রি করছে বা দিনমজুরের কাজ নিয়ে চলে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে। পরিত্যক্ত বহু তাঁতঘরে এখন সাপখোপের বাসা।

১৯৯৭ সালে নবদ্বীপে প্রথম পাওয়ার লুম চালু করেন মহিম দেবনাথ। এক জন তাঁতি সাধারণ তাঁতে যেখানে দিনে মেরেকেটে চারটে লুঙ্গি বুনতে পারেন, সেখানে পাওয়ার লুমে চব্বিশ ঘণ্টায় গড়ে কুড়ি থেকে বাইশটা লুঙ্গি বোনা যায়। পরের দশ বছর নবদ্বীপের পাওয়ার লুমের স্বর্ণযুগ ছিল। কমবেশি দশ হাজার পাওয়ার লুম সেইসময় ওই অঞ্চলে চালু হয়। সেখানে তৈরি লুঙ্গি টক্কর দিতে শুরু করে দক্ষিণ ভারতের লুঙ্গিকে। তার পরেই তাল কাটল। হু-হু করে কমতে শুরু করল লুঙ্গির চাহিদা। বাড়তে লাগল সুতো, রঙ, বিদ্যুতের মাসুল, মজুরি। পাওয়ার লুমে ভাঁটার টান দেখা দিল। ২০১৩-১৪ সালের পর অবস্থা এমন হল যে, বহু পাওয়ার লুম উৎপাদন কমাতে বাধ্য হল।

পাওয়ার লুম মালিকদের সংগঠন ‘শ্রীচৈতন্য প্রগ্রেসিভ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি এবং এলাকার প্রথম পাওয়ার লুমের মালিক মহিম দেবনাথ বলেন, “বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ আর লুঙ্গি পরতে চাইছে না। নতুন প্রজন্মের ছেলেরা তো লুঙ্গি ধরেই না। গ্রামাঞ্চলের ছেলেরাও বারমুডা, জিনস, পাজামা, ট্রাউজারে ঝুঁকেছে। শুধু প্রবীণ মানুষের উপর নির্ভর করে লুঙ্গি উৎপাদন হচ্ছে। বদলে যাওয়া ফ্যাশনের ধারণার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হচ্ছে আমাদের পক্ষে।” (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement