Sarbhaja and Sarpuria

কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া-সরভাজার জিআই স্বীকৃতি দাবি

এহেন সরপুরিয়া ও সরভাজার জন্য ভারত সরকারের ‘জি আই’ স্বীকৃতির দাবি দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছেন শহরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:০০
Share:

জীভে জল আনা সরপুরিয়া। নিজস্ব চিত্র।

কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ থেকে ‘সবার উপরে’ চলচ্চিত্রের ছবি বিশ্বাস। প্রায় পাঁচশো বছর জুড়েই তার সগৌরব অবস্থান। কেউ যাতে চুরি করতে না পারে, সে জন্য নিশুতি রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে তাকে গড়তেন অধরচন্দ্র দাস। পর দিন সকালে বাড়ি ঘিরে থাকা মাছির ঝাঁক দেখে অনুমান করা যেত তার আগমনী। কৃষ্ণনগরের কিংবদন্তি প্রায় সরপুরিয়া এবং সরভাজার জীবনপঞ্জী এমনই চমকপ্রদ। এ বার সেই সরপুরিয়া এবং সরভাজার ‘জি আই’ (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি) তকমার দাবিতে সরব হল বাংলার মিষ্টিমহল। সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির কেন্দ্রীয় ২৩তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সরপুরিয়া ও সরভাজার জি আই তকমার জন্য শুরু হয়েছে প্রক্রিয়া।

Advertisement

১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সবার উপরে’ ছবির শেষ দৃশ্যে ছবি বিশ্বাসের সংলাপ— ‘আমার কুড়িটা বছর ফিরিয়ে দাও’ লোকের মুখে-মুখে ফেরে। সুপারহিট এ ছবির শুটিং হয়েছিল কৃষ্ণনগরের অধরচন্দ্র দাসের মিষ্টির দোকানে। কৃষ্ণনগরের নানা পরিচয়ের মধ্যে সরপুরিয়া, সরভাজার শহর পরিচয়টি অন্যতম। যদিও রেসিপি চুরি ঠেকাতে পারেননি অধরচন্দ্র। এখন শহর কৃষ্ণনগরে শতাধিক মিষ্টির দোকানের সকলেই সরপুরিয়া তৈরি করেন।

সরপুরিয়ার প্রাচীনত্ব নিয়ে দ্বিমত আছে। কেউ বলেন, স্বয়ং চৈতন্যদেব নাকি এই মিষ্টান্ন আস্বাদন করতেন। কৃষ্ণদাসের ‘চৈতন্যচরিতামৃত’-এ উল্লিখিত হয়েছে— “সরপুরী অমৃত পদ্মচিনি। খণ্ড খিরিসার বৃক্ষ ঘরে করি নানা ভক্ষ্য, রাধা যাহা কৃষ্ণ লাগি আনি।” ওই ‘সরপুরী’ আসলে আজকের সরপুরিয়া। ভিন্নমতে, দুধের সর, ক্ষীর, ছানা– এই তিন প্রধান উপকরণ ছাড়া সরপুরিয়া হয় না। প্রথম ছানা নাকি তৈরি হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে। প্রাসাদের কোনও এক উৎসবের জন্য আনা দুধ কেটে যাওয়া থেকেই ছানা আবিষ্কার। সুতরাং, ‘চৈতন্যচরিতামৃত’-এ উল্লিখিত ‘সরপুরী’ আর এই সরপুরিয়া এক নয়।

Advertisement

অনেকে আবার সরপুরিয়া আবিষ্কর্তা হিসেবে প্রচলিত অধরচন্দ্র দাসের নাম ঠিক বলে মানতে চান না। তাঁদের মতে, এই মিষ্টান্ন প্রথম তৈরি করেছিলেন তাঁর বাবা সূর্যকুমার দাস। কিন্তু অধরচন্দ্র ১৯০২ কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ায় সরপুরিয়ার দোকান করেন। সেই থেকে লোকমুখে তিনিই হয়ে যান সরপুরিয়ার উদ্ভাবক।

এহেন সরপুরিয়া ও সরভাজার জন্য ভারত সরকারের ‘জি আই’ স্বীকৃতির দাবি দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছেন শহরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। এই প্রসঙ্গে ‘কৃষ্ণনগর কৃষ্ণনগর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতি’র সম্পাদক প্রবীরকুমার মোদক বলেন, “এর আগে ১৯১৭ সালে আমরা জি আই তকমার জন্য আবেদন করেছিলাম। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আমাদের জানানো হয় যে, সরপুরিয়া ও সরভাজার জি আই স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু জি আই স্বীকৃতির সেই শংসাপত্র এখনও হাতে পাওয়া যায়নি।”

কিন্তু কেন? জবাবে কৃষ্ণনগর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতি তথা রাজ্য মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সহ সম্পাদক তাপস দাস বলেন, “তখনও আমাদের কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠন সোসাইটি আইনে নথিভুক্ত হয়নি। রেজিস্ট্রেশন নেই, এমন সংস্থার হাতে জি আই স্বীকৃতির শংসাপত্র দিতে রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট দফতর। পরবর্তী কালে ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সালে ১৯৬১ সালের পশ্চিমবঙ্গ সোসাইটি আইনে কৃষ্ণনগর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে (নম্বর – এস০০১০৭৮৮, ২০১৯-২০২০)। বিষয়টি জানিয়ে জি আই স্বীকৃতির শংসাপত্র দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। যদিও স্বীকৃতি এখনও মেলেনি।”

করোনার পর ফের অতি দ্রুত জি আই স্বীকৃতির শংসাপত্রের দাবি উঠেছে। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব বণিক জানান, জি আই তকমা পেতে অন্তত পাঁচশো পরিবারকে সেই শিল্পের উপরে নির্ভরশীল হওয়া প্রমাণ করতে হয়। তিনি বলেন, “আরও কিছু বিষয় আছে, যা আগেই কৃষ্ণনগর প্রমাণ করেছে। তাই সরপুরিয়া এবং সরভাজা ইতিমধ্যে জি আই স্বীকৃত। কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সোসাইটি রেজিস্ট্রেশনও হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আবেদন জানানো হয়েছে। এই বছরের শেষের দিকে সরপুরিয়া এবং সরভাজা জি আই তকমা পেয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement