পোষা পায়রার পিঠে হাত বোলানোর মতো আলতো করে এক বার হাত ছুঁইয়ে নিচ্ছে লোকটি। তার পর, পিচিক করে থুতু ফেলে অস্ত্রটা আকাশের দিকে তুলে বলছে, ‘‘এ মালের কদরই আলাদা! বোমার মতো বর্ষায় বাসি হবে না, যে দামে কিনেছি কাজ হাসিল করে সে দামেই বিকে দেব!’’ ডোমকল-রানিনগর কিংবা পড়শি নদিয়ার বক্সিপুর— সীমান্ত ছুঁয়ে এমনই পরম আদরের হয়ে উঠেছে প্রাক নির্বাচনী অস্ত্রটি, ‘বিহারি পিস্তল’। সটান মুঙ্গের থেকে মুর্শিদাবাদ আর নদিয়ার গাঁ গঞ্জে এ বার সেই বুঝি পাটরানি!
ভোট এলেই বারুদের ব্যবহার বেড়ে যায় জেলায়। আর ডাক পড়ে গ্রামের আনাচে নিশ্চুপে লুকিয়ে থাকা আটপৌরে চেহারার অস্ত্র ব্যবসায়ীদের। সকালে ডোমকল তো বিকেলে করিমপুর। জেলা ভেঙে এখান থেকে ওখানে, মোটরবাইকে অনবরত ঘুরে বেড়াচ্ছে কারবারিরা, ‘মাল পৌঁছে দিতে হবে না!’
রাজনৈতিক দাদাদের আবদার মেটাতে এ সময়ে অস্ত্র-বারুদের ব্যবহার যে বাড়ে মুর্শিদাবাদের এক পুলিশ কর্তা তা মেনে নিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘এ আর নতুন কথা কি, ভোটে অস্ত্রের ব্যবহার হবে না!’’ নদিয়ার এক পুলিশ কর্তা বলছেন, ‘‘আগে ছিল বোমার রমরমা, হরেক তার রকম। এখন সটান আগ্নেয়াস্ত্রে চলে গিয়েছে রাজনীতির কারবারিরা। ব্যবসায়ীদের আগাম বায়না করে ‘মাল’ আনাচ্ছেন তাঁরা।’’
বোমার মশলার হ্যাপা অনেক। ভোটে ব্যবহার না হওয়া মশলা এক বর্ষাতেই নষ্ট হয়ে যাবে। বোমার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। এক কারবারির কথায়, ‘‘বড় তোয়াজ করে রাখতে হয় বোমা। এই বুঝি ফেটে গেল!’’ কিন্তু পিস্তলের সে ঝামেলা নেই। নদিয়ার এক তাবড় রাজনীতির দাদা বলছেন, ‘‘পিস্তল লুকিয়ে ফেলাও যেমন সোজা, কাজও তেমনই অব্যর্থ!’’
শুধু তাই নয়, এক কারবারি ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ব্যবহারের পরে বিহারি পিস্তল প্রায় একই দামে বেচে দেওয়া যায় সীমান্তে। বাংলাদেশে সে জিনিসের ভীষণ কদর!’’ বোমা তাই বাতিল এ বার। তার জায়গা নিয়েছে বিহারি পিস্তল।