প্রতীকী ছবি।
লকডাউনের ধাক্কায় ভাগীরথীতে খেয়া পারাপার বন্ধ। নদী পারাপার করতে না পারায় তাই সাগরদিঘির গৌরীপুর হাইস্কুল ও ভগবানগোলার ওলাহার হাইস্কুলের প্রায় শ’পাঁচেক ছাত্রছাত্রীর কাছে মিডডে মিলের চাল,আলু অধরাই থেকে গেল। আজ, বৃহস্পতিবারই ওই চাল-আলু সংগ্রহের শেষ দিন। অভিভাবকেরা তাই আবেদন করেছিলেন ভগবানগোলা ১ ব্লকের বিডিও-র কাছে। তবে, স্কুল সংলগ্ন বন্ধ ফেরিঘাট খুলে দিতে রাজি হননি প্রশাসনিক কর্তা, এমনই দাবি করেছেন তাঁরা।
সোমবার থেকে স্কুলগুলিতে পড়ুয়া প্রতি ৩ কেজি আলু আর চাল দেওয়া শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেই বিনিবণ্টন চলার কথা। কিন্তু তাদের বরাদ্দ চাল-আলু আর মিলবে না ধরে নিয়েই সীতেশনগরের এক ছাত্র তাই বলছে, ‘‘বাড়িতে হাঁড়ির তলায় একটু চাল পড়ে আছে। ওই চাল-আলু পেলে আমরা তো খেতে পেতাম।’’
পশ্চিম পাড়ে সাগরদিঘি ব্লক, পূর্ব পাড়ে ভগবানগোলা ১ এবং লালগোলা ব্লক। মাঝে ভাগীরথী। সাগরদিঘির দিয়ার বালাগাছি সংলগ্ন গ্রামগুলির প্রায় শ’দুয়েক ছাত্রছাত্রী ভগবানগোলা ১ ব্লকের ওলাহার হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। ভাগীরথী নদীর সুন্দরপুর ফেরিঘাট পেরিয়েই তাদের স্কুলে যাতায়াত। অন্যদিকে, পূর্বপাড়ের লালগোলার সীতেশনগর ও তার আশপাশের গ্রামের প্রায় ৪০০ ছেলেমেয়ে পড়ে সাগরদিঘির গৌরীপুর হাইস্কুলে। নদী পার হতে ওই ফেরিঘাটই তাদের ভরসা।
ওলাহার হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মহম্মদ খাদেম রসুল বলেন, “লকডাউনের জন্য সুন্দরপুর ফেরিঘাট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। তার ফলে দিয়ার বালাগাছির শ’দুয়েক পড়ুয়ার অভিভাবকেরা চাল নিতে স্কুলে আসতে পারছেন না।’’ সাগরদিঘির গৌরীপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ মণ্ডল বলেন, ‘‘সীতেশনগরে কোনও স্কুল নেই। তাই ৪০০ ছেলেমেয়ে গৌরীপুর হাইস্কুলে আসে নৌকায়। এখন সব বন্ধ। চাল-আলু তাই স্কুলেই পড়ে থাকল।’’ ভগবানগোলার বিডিও পুলককান্তি মজুমদার বলেন, “ফেরিঘাট আপাতত চালু করা সম্ভব নয়। তাই সাগরদিঘির পড়ুয়াদের অভিভাবকদের বলা হয়েছে একটু ঘুর পথে আরিজপুর ফেরিঘাট ব্যবহার করে আসতে। এ ছাড়া বিকল্প কোনও রাস্তা নেই।”
বালাগাছির বাসিন্দা খোস মহম্মদ বলছেন, “লকডাউনের বাজারে, ওই সামান্য চাল-আলুও দুর্মূল্য। কিন্তু আজিজপুর ঘাট দিয়ে পারাপার করতে গেলে ৩ কেজি আলু-চালের জন্য ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হবে, যাব কী করে!’’
হুমায়ুন কবিরের মেয়ে পড়ে নদী পাড়ের স্কুলে। হুমায়ুন বলছেন, “ফেরিঘাট খুলতে যদি আপত্তি থাকে তা হলে স্থানীয় কোনও স্কুল থেকেই তো ওই বরাদ্দ বণ্টন করা যেত। লকডাউনের এই সময়ে খাবারের অভাব রয়েছে বলেই তো গ্রামের মানুষ আকুল হয়ে আবেদন করেছিল, না শুনলে কী আর করা যাবে!’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)