প্রতীকী ছবি।
রবিবার ১২ জন, সোমবার ন’জন, মঙ্গলবার ১৪, বুধবার ১৯। নবদ্বীপ শহরে লকডাউন ভাঙায় পরপর চার দিনে গ্রেফতার হয়েছেন ৫৪ জন। জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শহরের এক শ্রেণির মানুষের অকারণে পথে বেরনোর প্রবণতা কমছে না। পুলিশ-প্রশাসনও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ।
পুরনো শহর নবদ্বীপ এমনিতেই ঘিঞ্জি। বহিরাগত লোকজনের অনর্গল যাতায়াত। লকডাউনের পরেও সেই যাতায়াত কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়নি। গত ২৩ মার্চ লকডাউন চালু হওয়ার পর থেকে নবদ্বীপ শহরে হোম কোয়রান্টিনের সংখ্যা পৌঁছেছিল পাঁচশো পঞ্চাশে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য সংখ্যাটা কমে একশো চুয়াল্লিশে নেমেছে। নানা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা লোকজন লকডাউনের মধ্যেই বাড়ি ফিরছেন। চেন্নাই থেকে বহু টাকা দিয়ে আম্বুল্যান্স ভাড়া করে নবদ্বীপে ফেরার নজিরও আছে। চিকিৎসা, পড়াশোনা বা কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকতেন এমন মানুষেরা পণ্যবাহী গাড়ি ধরে বা অন্য কোনও উপায়ে নবদ্বীপে ফিরে এসেছেন।
নবদ্বীপ শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার যুব আবাসে তৈরি হওয়া কোয়রান্টিন সেন্টারে বর্তমানে ৩৮ জন আছেন। যদিও নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, এঁদের মধ্যে ১২ জনের নিভৃতবাস পর্ব মিটলেও ভিন্ রাজ্যের মানুষ হওয়ায় লকডাউন পর্ব না মেটা পর্যন্ত তাঁরা ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে ১১ জন ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের বাসিন্দা, এক জন
উত্তরপ্রদেশের কানপুরের।
তবে নবদ্বীপে বিপদের আশঙ্কা তো শুধু বহিরাগত নিয়ে নয়। ঘরের পাশেই বর্ধমান। দু’বেলা নবদ্বীপের সঙ্গে যাতায়াত শ্রীরামপুর, বিদ্যানগর, পারুলিয়া, হেমায়েতপুর, জাহান্নগর বা ভাণ্ডারটিকুরির। বিপদ সেখান থেকেও আসতে পারে। নবদ্বীপ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সম্পাদক এবং প্রবীণ আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “দেশি-বিদেশি পর্যটকের কারণে প্রথম থেকেই নবদ্বীপ অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। শহরের তিন দিক ঘিরে বর্ধমান। প্রতিনিয়ত মানুষ যাতায়াত করছেন। কোনও নাকা চেকিং নেই। বাজার সরানো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভিড় সেই আগের মতো। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে প্রতি দিন যে ভিড় হচ্ছে তাতে কোথায় পারস্পরিক দূরত্ব? পাইকারি বড় বাজারে
ভিড় হচ্ছে।”
নবদ্বীপের সব ক’টি বাজারে আনাজ, মাছ, মাংস এবং দুধের জোগান আসে পাশের বর্ধমান থেকে। ফলে সেই আসা-যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রাতর্ভ্রমণের অছিলায় বা দিনভর মোটরবাইকে পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা বন্ধ হবে কবে, সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা জানান, বেঁধে দেওয়া হয়েছে টোটোর সংখ্যা, নির্দিষ্ট করা হয়েছে স্ট্যান্ড। প্রশাসন যতটা সম্ভব সজাগ আছে। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা কাজ করছেন। প্রতি দিন বাজার, বিভিন্ন অফিস, পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল জীবাণুনাশক সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে শোধন করা হচ্ছে। তবে তাঁর মতে, “তবে সব কিছুর শেষ কথা মানুষের সচেতনতা।“ আর নবদ্বীপের আইসি কল্লোলকুমার ঘোষের দাবি, “পুলিশ যে তৎপর, নিয়মিত আইনভঙ্গকারীদের গ্রেফতারই তার প্রমাণ।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)