ফাইল চিত্র
এক বিঘাও জমি নেই যে চাষ করে সংসার চালাবো। দিনমজুরের কাজ করে কোনও ভাবে দিন গুজরান করতে হয়। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ও দু’ছেলে মেয়েকে নিয়ে মোট পাঁচ জনের সংসার। সব দিন কাজ হয় সেটাও নয়। তাই বছর তিনেক ধরে কেরলে রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করি। থাকা ও খাওয়া খচর নিজেকে করলেও মাসে প্রায় ১৮ হাজার টাকা উপার্জন হয়। সব থেকে বড় বিষয় কাজের অভাব ওই রাজ্যে নেই। ভালই ছিলাম।
সব কিছু বেমালুম বদলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। ওই ভাইরাসকে রোধ করতে গিয়ে জনতা কার্ফুর মাধ্যমে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই কর্মহীন হয়ে গিয়েছে।
কেরলে লকডাউনের সময় বসে বসে নিজের টাকায় খাওয়া আর ঘর ভাড়া গুনতে হচ্ছিল। আবার মাঝেমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের খাবারও দিয়েছে। প্রথম দফার তিন সপ্তাহের লকডাউনে কেরালেই ছিলাম। লকডাউনের মেয়াদ দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছিল। তবে তিন বছরের মধ্যে কেরালার সঙ্গে নিজের অজান্তে কেমন যেন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলাম।
ওই এলাকার ভাষা, খাওয়া দাওয়া সব কিছুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু লকডাউনের সময় কেরালা থেকে বাড়ি ফিরতে যে কষ্ট হয়েছে এমন কষ্ট আমার জীবনে কোনও দিন এসেছে বলে মনে হয়না। সকলে মিলে একটি বাস ভাড়া করে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। ১২ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরতে সময় লেগেছে ছয় দিন। সকলের কাছেই টাকা খুব সামান্য পরিমাণে ছিল। ঘর ভাড়া মিটিয়ে বাস ভাড়া দেওয়ার পর হাজার তিনেক টাকা ছিল আমার কাছে। ওই টাকা থেকেই বেকারির কিছু বিস্কুট, মুড়ি, চানাচুর, চিঁড়ে আর ভেলিগুড় কিনে নিয়েছিলাম। ওই খাবার যদি কাছে না থাকতো তাহলে না খেয়েই মরতে হতো। কারণ একটার পর একটা রাজ্য পেরিয়ে আমাদের রাজ্যের দিকে যত এগিয়ে আসছি মনে আনন্দ হচ্ছে। অনেকটা পেটে খিদে মুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে আসছি। রাস্তার পাশে কোন খাবার হোটেল পর্যন্ত খোলা দেখা যায়নি। শেষে ওড়িশাতে আমাদের বাস থামিয়ে খাবার দিয়েছিল। চারদিন পর সে দিন রাতে গরম ভাত, ডাল আর একটা তরকারি খাইয়ে ছিল। মনে হয়েছে বহু বছর যেন ভাত খাইনি। ভাত খাওয়ানোর পর আমাদের কে আবার পাউরুটি আর পাকাকলা বেঁধে দিয়েছিল। অথচ আমাদের রাজ্যে ঢুকতেই দিচ্ছিল না। কিন্তু আমরাও ফিরে যাব না। শেষে পাঁচ ঘন্টা আটকে রাখার পর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে এরাজ্যে কাজের খুব অভাব, আমি আবার কেরলেই ফিরতে চাই।