সামাজিক দূরত্ব মেনেই মদের দোকানের সামনে লাইন। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
তখন অনেকেরই ঘুম ভাঙেনি, পাড়ার মদের দোকানের বাইরে লাইনটা সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে রাস্তায়। তবে সামাজিক দূরত্ব মানা হয়েছে। কিন্তু বেলডাঙার কালীতলা এলাকার মদের দোকানের মালিক মিঠু গায়েন সোমবার সকালে চোখ কচলে লাইন দেখেই চমকে ওঠেন। ব্যাপারটা কি! তাঁদের কাছে এখনও কোনও খবর নেই, আর এত লোক খবর পেল কোথা থেকে। শেষ পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের কাছ থেকে জানতে পারলেন বিকেল তিনটে থেকে মদের দোকান খুলতে হবে। পরে থানা থেকে পুলিশকর্তারা এসে বলে গিয়েছেন কিভাবে লাইন দাঁড় করাতে হবে।
তবে বিকেল তিনটে নাগাদ দোকানের ঝাঁপ খুলতেই কিছুটা হুটোপুটি শুরু করে করে ক্রেতার দল। যা দেখে কান্দির এক ব্যবসায়ী সটান বললেন, ‘‘একটা বোতলও বিক্রি হবে না, যদি সামাজিক দূরত্ব না মানেন।’’ সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল লাইন, একেবারে সামাজিক দূরত্ব মেনেই লাইন থেকে কেউ কেউ বললেন, ‘‘ওই ভুলটা করবেন না দাদা। ৪২ দিন ধরে কী কষ্টে যে আছি!’’ তবে একটা বোতল বগলদাবা করার পরে আবারও কাচুমাচু করে আবদার, দাদা আর একটা হলে খুব ভাল হত। কিন্তু ব্যবসায়ীর সাফ কথা, ‘‘একটাই যথেষ্ট।’’ কেউ বললেন, ‘‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে যেটা দিয়েছি সেটা ফেরত নেব।’’ আর কথা না বাড়িয়ে বোতলটা বগলদাবা করেই বাড়ির পথে রওনা দিলেন পবিত্র মণ্ডল।
জলঙ্গির পল্টু দাস মদের দোকানে এর আগে কখনও সুস্থ ভাবে আসেনি, যত দিন এসেছে টলতে টলতে এসেছে। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে দোকানের বাইরে লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে শান্ত ছেলের মতোই আচরণ করেছে সে। লাইন ছেড়ে নড়েনি, কেননা, লাইন যে চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কান্দি বেলডাঙা জিয়াগঞ্জ লালবাগে লম্বা লাইন পড়লেও বহরমপুর শহরে লম্বা লাইন দেখা যায়নি এ দিন।
এলাকার অনেক বাসিন্দাই বলছেন, সুরাপায়ীরা মদ না পেলে চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকছিলেন। কিন্তু চোলাইয়ে বিপদের মাত্রা অনেক বেশি। মদ পেতে শুরু করলে চোলাইয়ের সেই বিপদ কাটবে।
সেই সঙ্গেই, অনেক মহিলাদের ক্ষোভও জমেছে। একে কাজ নেই হাতে। তার উপরে মদ কিনতে খরচ করবেন না তো সংসারের পুরুষরা? মদ্যপদের অত্যাচারও বাড়বে না তো? পুলিশ ও আবগারি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, লকডাউন চলছে। সব দিকেই কড়া নজর রাখা হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)