প্রতীকী ছবি।
করোনার আবহে ত্রাণের চাল বন্টনকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে চলে এল। যা নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে দল এবং জেলা প্রশাসনও।
করোনার ধাক্কায় বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই রকম অনেক পরিবারে স্থানীয় পুরসভার মাধ্যমে চাল বিলি করা হচ্ছে। তিনটি পর্যায়ে পুরসভার হাতে প্রায় দেড়শো কুইন্টাল চাল তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই চাল বিলি করে হয়েছে কৃষ্ণনগর শহরের ২৪টি ওয়ার্ডে। কিন্তু কারা সেই চাল বিলি করবেন তা নিয়ে তুমুল মতবিরোধ শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরেই।
কৃষ্ণনগর পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে বহু দিন আগেই। চার জনের একটি বোর্ড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেই বোর্ডই বর্তমানে পুরসভা পরিচালনা করছে। সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মনীশ বর্মা। এবং এর অন্যতম সদস্য প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা।
অভিযোগ, অসীম সাহা-ই চাল বিলির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছেন, এবং তিনি এই কাজে স্বজনপোষণ করছেন। সরকারি চাল দলীয় ভাবে বিলি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর বিরোধী হিসাবে পরিচিত তৃণমূলেরই আট জন প্রাক্তন কাউন্সিলর। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরাসরি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে ওই চাল বিলি করা হয়েছে। কিন্তু বঞ্চিত করা হয়েছে তাঁদের। কারণ, তাঁরা অসীমবাবুর বিরোধী শিবিরের লোক বলে পরিচিত। জেলা প্রশাসন ও দলীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন। যদিও অসীমবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ওই আট জনের অন্যতম ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রদীপ দত্ত ওরফে মলয়। তাঁর অভিযোগ, “আমরা যাঁরা চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম এবং যাঁরা ওঁর বিভিন্ন অনিয়মের বিরোধিতা করেছি, তাঁদের উনি বণ্টনের জন্য ত্রাণের
চাল দেননি।’’
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘অসীমবাবু নিজের ঘনিষ্ঠদের দিয়ে চাল বিলি করাচ্ছেন। যে ১৬ জন প্রাক্তন কাউন্সিলর তাঁর অনুগত, তাঁদেরকেও তিনি চাল দিয়েছেন বিলি করার জন্য।”
অসীমবাবুর চরম বিরোধী বলে পরিচিত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর স্বপন সাহা বলছেন, “পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন আর কেউ কাউন্সিলর নই। আমরা চাই, সরকারি কর্মীদের মাধ্যমে চাল বিলি করা হোক।”
অসীম সাহার বিরোধিতা করেই তৃণমূল ছেড়়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর অসিত সাহা। তিনি বলেন, ‘‘ওই চাল কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, সেটা অসীমবাবু ভুলে যাচ্ছেন।” ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর নিভা দাস বলছেন, “আমাকে তো চাল দেনইনি, উল্টে তাঁর লোকজন আমার বাড়িতে গিয়েছিল ত্রাণের চালের কুপন দিতে।” যদিও অসীম সাহা বলছেন, “সম্পুর্ণ মিথ্যে অভিযোগ। ২৩ জন প্রাক্তন কাউন্সিলরকেই বলেছিলাম ত্রাণের চাল নিয়ে যেতে। দু’-তিন জন ছাড়়া সকলেই নিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে স্বয়ং মলয় দত্তও আছেন। তিনি আমার কাছ থেকে তিন বার চাল নিয়ে গিয়েছেন। সে নথিও আমার
কাছে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “বরং মলয়বাবু কাকে-কাকে চাল দিয়েছেন সেই তালিকা এখনও জমা দেননি। ফলে জেলা প্রশাসনকে আমি হিসাব দিতে পারছি না। প্রতিটি ওায়ার্ডে রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি ভল্যান্টিয়ারদের মাধ্যমে সমীক্ষা চালিয়ে চাল দেওয়া হয়েছে।”
কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মনীশ বর্মার বক্তব্য, ‘‘বোর্ডে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বিভিন্ন পয়েন্ট করে ত্রাণের চাল বিলির। সে ভাবেই হচ্ছে। কোনও স্বজনপোষণ হচ্ছে না। যদি কেউ বিলির জন্য চাল না পেয়ে থাকেন, তা হলে তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)