স্টিয়ারিঙের বদলে সর্ষের তেল হাতে জুব্বার। নিজস্ব চিত্র
ছিলেন বাসচালক। এখন সর্ষের তেলের ফেরিওয়ালা। বাসচালক জুব্বার শাহর অবস্থাই বুঝিয়ে দেয়, জেলায় পরিবহণ শিল্পের কী অবস্থা।
প্রথমে লকডাউনের কারণে প্রায় দু'মাসের বেশি সময় বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এ মাসের প্রথম থেকেই বিধি মেনে বাস চলাচল করার ছাড়পত্র দেয় পরিবহণ দফতর। কিন্তু বাস চলাচল শুরু হলেও মিলছে না পর্যাপ্ত যাত্রী। তা ছাড়া হুহু করে বাড়ছে তেলের দাম। বাস মালিকেরা বলছেন, ‘‘অন্য খরচ তো দূরের কথা, সারা দিন ট্রিপ করে তেলের খরচটুকুই উঠছে না।’’ ফলে, ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে অধিকাংশ বাস মালিকই বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাসের চালক এবং অন্য কর্মীরা। সংসার চালাতে তাঁদের অনেকেই ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
জুব্বার প্রায় দশ-এগারো বছর ধরে বাস চালান। জুব্বার চালাতেন বহরমপুর থেকে করিমপুর রুটের বাস। সেই রুটে সম্প্রতি বাস চলাচল শুরুও হয়। কিন্তু লকডাউনের আগে যে রুটের বাসে ভিড় উপচে পড়ত,তা এখন প্রায় ফাঁকাই থাকছে। তাতেই রুটে বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে। একই অবস্থা জেলার অন্য অনেক বাস রুটেও। তাই কাজ হারিয়েছেন জুব্বারের মতো বাসচালক ও কর্মীরা।
বাবা-মা, স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার জুব্বারের। কিন্তু প্রায় তিন মাস বাস চালানোর কাজ বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল তাঁকে। অবশেষে তিনি বেছে নিয়েছে বাপ-ঠাকুর্দার পুরনো পেশাকে। প্রতিদিন সকাল হলেই সাইকেলের পিছনে বহু পুরনো একটি সর্ষের তেলের টিন বেঁধে পাঁচ-সাতটা গ্রাম ঘুরে সাত-আট লিটার তেল বিক্রি করে সারা দিনে সাকুল্যে আয় হচ্ছে কমবেশি একশো টাকা। কিন্তু, তাতে কি আর সংসার চলে! রেশন দোকান থেকে জুটেছে চাল, মুসুর ডাল। আনাজপাতিটুকু কেনা বা অন্য খরচ তুলতে তাঁর ভরসা সেই সর্ষে তেল ফেরি। জুব্বার বলছেন, ‘‘তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘরে বসে। এ ভাবে ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। সর্ষে তেল বিক্রি করে যা সামান্য রোজগার হচ্ছে তাই দিয়ে কোনরকমে সংসারটা চলছে।’’
হরিহরপাড়ার বাস মালিক আনারুল ইসলাম বলছেন, ‘‘তেলের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সারাদিন বাস চালিয়ে সেই খরচটুকুই উঠছেনা। এ ভাবে আর কতদিন চলে। তাই আমাদের মতো অনেক মালিকই রাস্তায় বাস নামাচ্ছেন না।’’ ফেডারেশন অব বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক শ্যামল সাহা বলছেন, ‘‘বাস মালিকদের সঙ্গে ড্রাইভার, খালাসি, কন্ডাক্টরদেরও বেহাল অবস্থা। আমাদের বিকল্পও কিছু নেই। আমাদের নিয়ে ভাবারও কেউ নেই।’’
এখন সুদিন ফেরার অপেক্ষায় পরিবহণকর্মী ও মালিকেরা।