West Bengal Lockdown

গ্যারাজ ছেড়ে চায়ের দোকান ভাস্করের

করোনা অতিমারিতে যেন বন্ধ হয়ে রয়েছে সংসার। কিন্তু তা বললে সংসার শুনবে কেন! উনুন তো জ্বালতে হবে।  সংসার তো চালাতে হবে। তাই পেশা বদলে সংসার চালানোর মরিয়া চেষ্টা করছেন অনেকে। তাঁদের কাহিনি।বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের কাছে এক সাইকেল গ্যারাজের মালিক ভাস্কর সেখানেই খুলেছেন  চায়ের দোকান।

Advertisement

বিদ্যুৎ মৈত্র

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ০২:০১
Share:

দোকানের সামনে ভাস্কর।

করোনার হাত থেকে মুক্তি পেতে আনলক পর্বেও জারি আছে সাপ্তাহিক লকডাউন। বাস, টোটো, ট্রেকার চললেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি গণপরিবহণ ব্যবস্থা। থমকে আছে রেল যোগাযোগও। আর তাতেই বিশ বছরের রোজগারে টান পড়েছে ভাস্কর পালের। বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের কাছে এক সাইকেল গ্যারাজের মালিক ভাস্কর সেখানেই খুলেছেন চায়ের দোকান। বহরমপুর রেল স্টেশন লাগোয়া এসএনবাগচী রোডের বাসিন্দা মধ্য পঞ্চাশের ভাস্করকে স্থানীয় মানুষজন পিন্টু বলেই ডাকে।

Advertisement

বাপ ঠাকুর্দার বেকারি ব্যবসায় বরাত না খোলায় তিনি বেছে নিয়েছিলেন সাইকেল-বাইক গ্যারাজের ব্যবসা দু’হাজার সালের অন্তে। দারিদ্র ছিল, তা বলে অনাহার ছিল না পিন্টুর সংসারে। দিন গেলে আটশো হাজার টাকা আয়ে দিব্যি চলত দুই মেয়ে বৌ আর বৃদ্ধা মা’কে নিয়ে তার সংসার। টালির ছাদ পাকা না হলেও দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষার দরজায় পৌছে দিয়েছেন সেই সাইকেল গ্যারাজের আয় থেকেই। জনশূন্য বহরমপুর স্টেশনের আশেপাশের ভিড় কমে যায় সন্ধে নামার আগেই। উদাসী বিকেলে ফাঁকা স্টেশনের দিকে তাকিয়ে পিন্টু বলেন, “এই তো ক’দিন আগেও মানুষের থিকথিকে ভিড়ে স্টেশনে তিল ধারণের জায়গা যেমন থাকত না, তেমনই নাওয়া খাওয়ার সময়ও ছিল না আমার।” বাঁধা নিত্যযাত্রীদের সাইকেল, বাইক রাখতে ভোর সাড়ে চারটেয় গ্যারাজ খুলত সে। তারপর সেই রাত বারোটায় শেষ ট্রেন হুইশেল দিয়ে স্টেশন ছেড়ে চলে গেলে গ্যারাজের কপাট লাগিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া ছিল তাঁর রোজকার রুটিন। গত পাঁচ মাসে চেহারাটাই বদলে গিয়েছে স্টেশন চত্বরের। বেশ কিছু দিনের না কাটা কাঁচা পাকা দাড়ির শুকনো মুখে পিন্টু বলেন, “লকডাউনে তো আর পেট বন্ধ থাকে না, তাই খেতে হলে নতুন পথ তো খুঁজতেই হবে।”

তিনি বলছেন, ‘‘কম করে সাতশো টাকার আয় দাঁড়িয়েছে শ’দেড়েকে। এই দিয়ে কি আর সংসার চলে?” পিন্টুর দোকানে চা খেতে আসা স্টেশনের রিকশা চালক থেকে মুটে সকলেই একই প্রশ্ন করছেন। তাঁদের অনেককেও বেঁচে থাকতে পেশা বদল করতে হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement