West Bengal Lockdown

ট্রেন চলবে কবে? খিদে পেটে ভিন্ রাজ্যে অপেক্ষায় দশ শ্রমিক

ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, এখন অবস্থা এতটাই খারাপ যে, দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।

Advertisement

সাগর হালদার 

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০১:৪৪
Share:

নিজস্ব চিত্র

প্রায় পনেরশো কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ভারতের তেলঙ্গানায় লকডাউনে আটকে রয়েছেন তেহট্ট এলাকা-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গার ১০ জন শ্রমিক।

Advertisement

তেলঙ্গানার ডোমরুপচমপল্লি জেলায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজের সূত্রে তাঁরা সেখানে যান। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেখানেই আটকে পড়েন। বর্তমানে সংস্থার কাজ বন্ধ, যা টাকাপয়সা ছিল, তা-ও শেষ হয়ে গিয়েছে। ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বক্তব্য, তেলঙ্গানা রাজ্যের ওই জেলার চার জন আধিকারিক তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বললেও এখনও সাহায্য পাননি।

পরিযায়ী শ্রমিক বিভাস মণ্ডল এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘টাকাপয়সা নেই। কেউ সাহায্যও করছেন না। আমরা কি না খেয়ে মরব?’’

Advertisement

ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, এখন অবস্থা এতটাই খারাপ যে, দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। দুই বার করে রাজ্যে ফেরার ট্রেনের টিকিট বাতিল হয়েছে তাঁদের। চরম খাদ্যসঙ্কট ও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে,দক্ষিণ ভারতের ডোমরুপচমপল্লি নামক ওই জেলায় আটকে রয়েছেন তেহট্টের ভজন বিশ্বাস, রঘুনাথপুরের বিভাস মণ্ডল, বিকাশ মণ্ডল, চাঁদেরঘাটের সুজয় মণ্ডল, বিরাজ মণ্ডল, সুদীপ মণ্ডল। এ ছাড়াও রয়েছেন শিবপুরের প্রলয় সিহি ও রাকেশ সিহি, করিমপুরের শঙ্কর মণ্ডল এবং ভীমপুরের গৌতম মণ্ডল। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রত্যেকেই বর্তমানে আর্থিক কষ্ট এবং খাদ্যাভাবের মধ্যে রয়েছেন। ওই মানুষগুলির দাবি, প্রথম পর্যায়ের লকডাউন শুরু হলে তাঁরা প্রথমে কিছু চাল-ডাল কিনে আনেন। এর পর তেলঙ্গানা প্রশাসনের তরফে কিছু খাদ্যসামগ্রী তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফার লকডাউন শুরু হতেই নতুন করে খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিতে থাকে। জমানো টাকা থেকে সামগ্রী কিনে এনে চালালেও এখন তা প্রায় শেষের দিকে।

তেহট্টের বাসিন্দা ভজন বিশ্বাস জানাচ্ছেন, কাজের সূত্রে ডিসেম্বর মাস থেকেই তিনি সেখানে রয়েছেন। বাকিরা তারও আগে থেকে রয়েছেন সেখানে। গত মার্চ মাসে ওই শ্রমিকদের জেলায় ফেরার কথা ছিল। সেই মতো আগে থেকেই ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু লকডাউনে ট্রেনের টিকিট বাতিল হয় দুই বার।

ওই শ্রমিকদের দাবি, প্রথম দিকে তেলঙ্গানা প্রশাসন খাবার দিলেও পরে তাঁদের জন্য আর কোনও সাহায্য আসেনি। আর্থিক সঙ্কটের জেরে তাঁরা শেষমেশ যোগাযোগ করে তেলঙ্গানার ডোমরুপচমপল্লির কালেক্টরের সঙ্গে। চার জন আধিকারিক তাঁদের কাছে আসেন, কথা বলেন। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। ওই আধিকারিকেরাসাফ জানিয়ে দেন, যে সংস্থার হয়ে তাঁরা ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে এসেছিলেন, সেই সংস্থার ঠিকাদারের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হবে। খাদ্যের সংস্থান ওই ঠিকাদারই করবেন। কিন্তু লকডাউনে সংস্থার কাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাদারও কোনও সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এই অবস্থায় পেটে খিদে নিয়ে ভিন্ রাজ্যে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওঁরা। যে ভাবেই হোক তাই বাড়ি ফিরতে চান ওঁরা। তাকিয়ে রয়েছেন, কবে ট্রেন চালু হবে সেই দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement