প্রতীকী ছবি।
মাটির গভীরে সিঁধ কেটেছে চোর। ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পুলিশ-প্রশাসন। এ দিকে, কিছু বাড়িতে হায়-হায়, আবার কারও ঘরে জলোচ্ছ্বাস, মুখে চওড়া হাসি। এ ভাবেই চলছিল ‘অবাক জলপান’।
জানাজানি হল হঠাৎই।
অভিযোগ, রীতিমতো হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির কায়দায় মাটির গভীরে বেমালুম চুরি হয়ে যাচ্ছিল জল। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের বড় পাইপ কেটে তার মধ্যে ছোট পাইপ লাগিয়ে ‘বেপথে’ চলে যাচ্ছিল লিটার কে লিটার জল। বড় রাস্তা থেকে মাটির নীচ দিয়ে সেই পাইপ সেঁদিয়ে যেত বাড়ির মধ্যে। মাটির উপরে কেউ টেরটিও পেত না।
পুরো হরিণঘাটা জুড়ে গত দু’বছর ধরে চলছে এমন কারবার। পুলিশ জানিয়েছে, ব্যাপারটা ধরা পড়ে এ ভাবে— প্রথমত, যেখানে যতটুকু জল যাওয়ার, তা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পাইপ কেটে জল নেওয়ার জন্য মূল পাইপে মিশছে হাজারো আবর্জনা-জীবাণু।
পরিস্থিতি সামলাতে এখন বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো টহল দিতে শুরু করেছে পুলিশ। তাতে জল চুরি অনেকটাই কমেছে বলে মত পুরসভা এবং পঞ্চায়েত সমিতির। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য।
বছর দুয়েক হল পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা হয়েছে হরিণঘাটা। কিন্তু পরিকাঠামো এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। নেই নিজস্ব জল সরবরাহ ব্যবস্থাও। পুরসভার হওয়ার কিছু আগে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর। তবে তা বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ ব্যবস্থা নয়। বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ওই জলের পাইপলাইন গিয়েছে। রাস্তায় ট্যাপ কলের স্ট্যান্ড তৈরি করে সেখান থেকেই জল নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রথমটায় সব ঠিকঠাকই চলছিল। গোল বাঁধে গত গ্রীষ্মে। দেখা যায় বেশ কিছু এলাকায় জল তেমন পৌঁছচ্ছে না। অন্যান্য এলাকায় জলের ধারা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এলাকার কিছু বাসিন্দা পুরসভায় জানান, বেশ কয়েক জন জলের মূল পাইপ থেকে কেটে সরু পাইপ দিয়ে ঘরে জল নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কয়েকটি বাড়িতে হানা দিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ তেমন ঘটনার প্রমাণও পায়। সেই ঘরগুলি থেকে পাইপ-লাইন খুলে নেওয়া হয়। অভিযোগ, তার পর থেকে রাতের অন্ধকারে পাইপ কেটে অন্য পাইপ লাগিয়ে জল চুরি শুরু হয়।
হরিণঘাটা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী তপনজ্যোতি বিশ্বাস বলছেন, ‘‘হুকিং করে জল নেওয়ার জন্য পাইপলাইনের জল দূষিত হয়ে যাচ্ছে। জলে নানা রকমের নোংরা জিনিস মিশছে।’’ আবার ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডলের অভিযোগ, জল চুরির জন্য তাঁদের এলাকাতে জল পৌছচ্ছে না।
হরিণঘাটার পুরপ্রধান রাজীব দালাল বলছেন, ‘‘সমস্যাটা সত্যিই ভয়ঙ্কর। এলাকায় জলের অভাব রয়েছে। আমরা একটা জমি পেয়েছি। সেই জমিতে নতুন জল প্রকল্প তৈরি হলে সমস্যা কিছুটা মিটবে। আপাতত জল চুরি বন্ধ করতে আমরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছি। তাতে অনেকটাই লাগাম দেওয়া গিয়েছে।’’