জেগে উঠছে গঙ্গার চর। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
শুখা মরসুমে গঙ্গার জলস্তর নেমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর গরমকালে নবদ্বীপে গঙ্গার জল কমতে কমতে তলানিতে ঠেকে। গঙ্গার বুকে চর জেগে ওঠে। এলাকার মানুষ সেখানে চাষ আবাদও করেন। কিন্তু অন্যান্য বার যেখানে বৈশাখ মাসে হাঁটু জল থাকে সেখানে জলস্তর নেমে যাওয়ার সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছে মাঘের গোড়া থেকেই।
জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এসে নবদ্বীপে গঙ্গার জলস্তর দাঁড়িয়েছে কমবেশি ৪ মিটারে! গত ১৭ জানুয়ারি নদিয়ার স্বরূপগঞ্জে জলতল থেকে গঙ্গার জলস্তরের উচ্চতা ছিল মাত্র ৪.২ মিটার। সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে গত পাঁচ দশকে নবদ্বীপে গঙ্গার জল এতখানি নীচে নামল এই প্রথম বার। সাধারণত এই সময়ে গঙ্গার জলতল থেকে জলস্তরের গড় উচ্চতা থাকে ৫.২ মিটার-৫.৫ মিটারের আশাপাশে।
শুখা মরসুমের ঢের আগেই গঙ্গার জলস্তরের এই হাল হওয়ায় নবদ্বীপ-মায়াপুর বা নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জ রুটে খেয়া পারপার নিয়ে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছে নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। নদীতে জলের অভাবে বদলে ফেলতে হয়েছে খেয়াঘাট। মূল বাঁধানো জেটি ছেড়ে আঘাটায় অস্থায়ী বাঁশের মাচা দিয়ে খেয়া চালাতে বাধ্য হচ্ছেন মাঝিরা। জলপথ পরিবহণ সমিতির সম্পাদক অলোক মণ্ডল বলেন, “অন্যান্য বার চৈত্র-বৈশাখ মাসে জল কমলে ঘাট সরাতে হয়। কিন্তু এ বারের মতো অবস্থা কখনও দেখিনি। পৌষের শেষ সপ্তাহে আমরা ঘাট সরাতে বাধ্য হয়েছি।’’
কেন এই অবস্থা?
উত্তরে জেলা সেচদপ্তরের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুবীর রায় বলেন, “ভারত বাংলাদেশ গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তিতে প্রতি বছর এই সময়ে বাংলাদেশকে গঙ্গার জল দিতে হয়। তখন এ দিকের জলে টান পরে। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টির স্বল্পতা। তার উপরে এই সব অঞ্চলে নদীতে পলি পড়ে নদীখাতের গভীরতা নেই বললেই চলে। সব মিলিয়ে এমন বিপর্যয়।”
পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তি। সেই কারণেই ফিডার ক্যানাল নিয়ে জল সরবরাহ কমেছে। এই ফিডার ক্যানাল বেয়েই জল গিয়ে পড়ে জঙ্গিপুরের কাছে ভাগীরথীতে যা নবদ্বীপ হয়ে হুগলি নদী হয়ে মিশেছে কলকাতায়। ৩১ মে পর্যন্ত এই জল চুক্তি কার্যকর থাকে প্রতি বছর। সে ক্ষেত্রে বৃষ্টি না-হলে জলের সেই ঘাটতি মেটা সম্ভব হয় না। জল সঙ্কটের কারণে ফিডার ক্যানালে ঘোড়াইপাড়া – ফরাক্কা ব্যারাজের গুরত্বপূর্ণ ফেরিঘাটেও নৌকা পারাপার বন্ধ করে দিতে হয়েছে ইতিমধ্যেই।
উল্লেখ্য, গঙ্গায় জল সঙ্কটের কারণে ২০১৬ সালে তিন বার বন্ধ করে দিতে হয় এনটিপিসির ফরাক্কা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬টি ইউনিটের সবগুলিই। ১৯৯৭ সাল থেকে জল চুক্তি কার্যকর হলেও এত দিন তার প্রভাব সে ভাবে পড়েনি। কিন্তু যতদিন গিয়েছে ততই পলির পরিমাণ বেড়েছে ফরাক্কা ব্যারাজে।
ফলে গভীরতা কমে যাওয়ায় ব্যারাজের জলপ্রবাহ ৯০ হাজার কিউসেক থেকে অনেকটাই কমে এসেছে এই সময়ে। বৃষ্টি না হলে আগামী মে মাস পর্যন্ত এই সঙ্কট চলবে বলে আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। ফরাক্কা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জনসংযোগ আধিকারিক শৈবাল ঘোষের কথায়, “পরিস্থিতির মোকাবিলায় ফিডার ক্যানালে ১০টি পাম্প মেসিন বসিয়ে ফিডার ক্যানাল থেকে আগেই বাড়তি জল তুলে রেখে ব্যবহার করা হচ্ছে ইনটেক ক্যানালে।’’
(সহ প্রতিবেদন: বিমান হাজরা)