চরের গাঁয়ে তেষ্টায় ছাতি ফাটে

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন জলঙ্গির পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাইফুল মোল্লা। স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজাউদ্দিন। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।শুখা মরসুমে পদ্মাপাড়ের গ্রামগুলিতে জলের স্তর কমে যাওয়ায় পানীয় জলের বড় সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। অনেক দূর দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে মানুষকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৪
Share:

বিকল কুয়ো। জলঙ্গির গৌরীপুরে। —সাফিউল্লা ইসলাম

শুখা মরসুমে পদ্মাপাড়ের গ্রামগুলিতে জলের স্তর কমে যাওয়ায় পানীয় জলের বড় সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। অনেক দূর দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে মানুষকে।

Advertisement

নওসাদ মণ্ডল, গৌরীপুর

এগুলি সাধারণত গ্রাম পঞ্চায়েত দেখে। তবে নতুন করে বিএডিপি প্রকল্পে ১১টি সজলধারা প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছি আমরা। সেগুলি হলে এই সমস্যা অনেকটা মিটবে।

Advertisement

নওদাপাড়া থেকে সুশীলের বটতলা পযর্ন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তাটি বেহাল। বড় বড় গর্ত। দুর্ঘটনা বাড়ছে। সারানোর ব্যবস্থা হলে খুব ভাল হয়।

অসীম মণ্ডল, দয়ারামপুর

প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ওই রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছিল। ওই যোজনার আওতায় জেলার প্রায় ৮০টি রাস্তা সংস্কার হবে। একটি কেন্দ্রীয় দলও ঘুরে গিয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি রাস্তাটি সংস্কার হবে।

একটা সময় ডিপ-টিউবয়েল, রিভার পাম্প এবং ক্লাস্টারের মাধ্যমে জলঙ্গির সেচ ব্যবস্থায় বিপ্লব আসে। এখন সেগুলি অধিকাংশ বিকল হয়ে পড়েছে। নিজের পাম্পসেট দিয়ে বা চড়া দামে জল কিনে জমিতে সেচ দিচ্ছেন চাষিরা।

আমজাদ হোসেন, খয়রামারি

কোথাও জলস্তর নেমে যাওয়ায়, কোথাও জলের অভাবে বা মেরামতির অভাবে পড়ে আছে ডিপ-টিউবয়েল বা রিভার পাম্প। আর ক্লাস্টারও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দফতরের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেও কোনও লাভ হয়নি।

একটা সময় যুব-কল্যাণ দফতর থেকে নানা খেলার সামগ্রী দেওয়া হত। এখন সে সব কিছু দেওয়া হয় না। চাইতে গেলে নেই বলা হয়।

শাহনওয়াজ হোসেন, রওশননগর

এর আগেও ক্রীড়া সরঞ্জাম নিয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এখন শুনছি সরঞ্জাম আর দেওয়া হচ্ছে না। ওই দফতরটি ক্যাম্পাসের বাইরে ভেতরে জায়গা দিলেও আসতে চাইছে না। আমরা আবারও কথা বলব।

সরকারি বিল একের পর এক ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে যাচ্ছে। বিলের মাঝে দিঘি বা পুকুর কেটে দখল নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। মৎসজীবীরা মাছ ধরতে পারছেন না বিলে।

সাইদুল ইসলাম, খয়রামারি

বিলের জমি নিয়ে বড় একটা চক্র কাজ করছে জলঙ্গিতে। ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক জলঙ্গিকে বেচে দিয়েছে বললেও ভুল হবে না। মূলত তাঁর সময়ে জলঙ্গির বড় বড় বিলগুলি সরকারি সম্পদ থেকে ব্যক্তিগত মালিকানা হয়ে গিয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলনও করেছি।

সীমান্তের ভারতীয় গ্রামে যেতে গেলে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হয় যে আমরা ভারতীয়। চাষের কাজে যেতে গিয়ে হাজার কৈফিয়ত দিতে হয় বিএসএফকে। মারধর থেকে গালাগাল নিয়মিত পাওনা আমাদের।

আব্দুর রজ্জাক মণ্ডল, ঘোষপাড়া

বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুব মুশকিলে। বিএসএফকে বলতে গেলেই বলে ডিউটি করছি। আউটপোস্টগুলি একেবারে সীমান্তে না গেলে এই সমস্যা থেকে যাবে। কখনও সার, কখনও খাবার বা গরু ছাগল নিয়ে যেতে গেলেও লাগে অনুমতি। প্রতিদিন আমাকে প্রায় ১০০টা শংসাপত্র দিতে হয় ওই এলাকার মানুষকে।

এলাকার বড় বিল, ষোলোমারি বিল দিনের পর দিন দখল করছে এলাকার জনা কয়েক লোক। তাদের দাপটে এখন ওই বিলে পাট পচাতে গেলেও টাকা দিতে হয়। প্রশাসনের কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়ল না।

ইয়াসিন আলি, রৌশননগর

এখানেও সেই একই কারণে বিল চুরি হচ্ছে। ভূমি সংস্কার দফতরের উদাসীনতা আর দুর্নীতির কারণে এমনটা হচ্ছে আমরা আবারও বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।

সাদিখাড়দেয়াড় এলাকায় পিএইচই’র পরিস্রুত জল প্রকল্প তৈরি হলেও তা এখনও চালু হয়নি। অনেক জায়গায় পাইপ ফেটে বেরিয়ে গিয়েছে। নোংরা জল খেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

তৌহিদুর রহমান, নওদাপাড়া

এই প্রকল্পটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে কম করে ১০০ বার গিয়েছি। এই হবে হচ্ছে বলেই চলেছে। আদতে কবে হবে বলা খুব কঠিন।

বিডিও অফিস চত্বরে একটি পানীয় জলের ট্যাঙ্ক আছে। কোনও দিন সেটি পরিষ্কার করতে দেখিনি। নোংরা জল বের হয়।

আরাদুল ইসলাম, জলঙ্গি

এই জলটা নিয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে দফতরের কর্মীদের সঙ্গে এর আগেও কথা বলেছি আবারও বলব।

বাজার লাগোয়া পাড়া জলঙ্গি বিশ্বাস পাড়া। রাজ্য সড়ক থেকে প্রায় এক কিমি ইটের রাস্তাটি বেহাল। বর্ষা নামলে কাদা হয় ওই রাস্তায়। দীর্ঘদিন ধরে কোনও সংস্কার হয়নি।

বাগবুল আমিন, বিশ্বাসপাড়া

ওই রাস্তার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত কাজ হবে।

পদ্মাপাড়ে মানুষের ভিড় হলেও সেখানে কোনও শৌচাগার নেই। বাইরে থেকে অনেকে কেউ বেড়াতে এলে খুব মুশকিলে পড়েন।

লিঙ্কন মণ্ডল, জলঙ্গি

ওই এলাকায় শৌচাগার নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে।

পদ্মাপাড়ে অনেক রাত পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। অথচ সেখানে লাইটগুলো বিকল।

আসরাফুল ইসলাম, বিশ্বাসপাড়া

ইতিমধ্যেই লাইট বদলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে ওই কাজটাও হয়ে যাবে।

একশো দিনের কাজে বেছে বেছে দশ’জন করে লোক নেওয়া হচ্ছে। আবেদন করেও কাজ পাচ্ছি না।

নজরুল মণ্ডল, জলঙ্গি

এমনটা হওয়ার কথা নয়, বিষয়টি নিয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা বলব।

সাদিখাড়দেয়াড় হাসপাতালে এক্সরে পরিষেবা বন্ধ। রোগীদের বাইরে এক্সরে করতে হচ্ছে।

তোজাম্মেল হক, সাদিখাড়দেয়াড়

বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের। তবুও আমরা এ নিয়ে কথা বলব।

গ্রামের ইন্দারা থেকে কালুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার রাস্তা এখনও কাঁচা। ফলে বর্ষায় মুশকিলে পড়তে হয় হাজার হাজার মানুষকে।

সাইদুল ইসলাম, নওদাপাড়া

খোঁজ নিয়ে ওই রাস্তার সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব আমরা।

চরের গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে কর্মীদের দেখা মেলে না। বার বার আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি।

জাব্দুল মণ্ডল, চর পরাশপুর

কর্মীদের যাওয়ার ব্যাপারটি স্বাস্থ্য দফতরের দেখার বিষয়। তবু এ নিয়ে কথা বলব।

এক যুগ আগে গ্রাম তৈরি হলেও চরের গ্রামে রাস্তা নেই। নেই বিদ্যুৎ বা পানীয় জলের ব্যবস্থাও। গরম কাল পড়লে তেষ্টায় ছাতিটা ফেটে যায়।

মিনারুল ইসলাম, চর পরাশপুর

নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সীমিত ক্ষমতা নিয়ে আমরা ওই এলাকার রাস্তার কাজে হাত দিয়েছি। ইতিমধ্যে একটি ঢালাই রাস্তাও হয়েছে। আগামীতে আরও পরিকল্পনা আছে আমাদের।

মহকুমার বিনোদনের জায়গা বলতে জলঙ্গির পদ্মাপাড়। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ঘুরতে আসেন। বিশেষ করে গরম কালে বিকেল হলেই হাজারও মানুষ জড়ো হয় এখানে। একটি পার্ক হওয়ার কথা ছিল, কিছুটা কাজ এগিয়ে গেলেও এখন অবৈধ ভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকা।

নওসাদ আলি, জলঙ্গি

ওই এলাকা নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা রয়েছে। তার জন্য ইতিমধ্যেই আমরা প্রস্ততি নিয়েছি।

কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় করে জলঙ্গিতে একটি পান হাট তৈরি করা হয়েছিল। এখন সেখানে কোনও ব্যাবসায়ী যান না। শেড নষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে রাস্তার উপরে বসছে বাজার।

বাপ্পা মণ্ডল, জলঙ্গি

পান ব্যাবসায়ীরা সেখানে না বসায় আমরা নতুন করে পরিকল্পনা নিয়ে সেটিকে ব্যবহারের জন্য ব্যবসায়ী সমিতিকে বলা হয়েছে। তারা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করলে ভাল হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement