এত দিন নানা হাসপাতালে আয়ারাজ নিয়ে অভিযোগ ছিল আমজনতার। এ বার একই অভিযোগে সরব হলেন চুক্তিভিত্তিক ‘ওয়ার্ড গার্ল’-রা।
রোগীদের সেবা করার জন্য কয়েক মাস আগে ওয়ার্ড গার্ল নিয়োগ করা হয়েছে ডোমকল মহকুমা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। তাঁদের অভিযোগ, আয়ারা তাঁদের রোগীর কাছাকাছি ঘেঁষতেই দিচ্ছেন না। শুধু বাধা দেওয়া নয়, মারধরের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। রোগীর পরিজনদের থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। হাসপাতালের সুপার প্রবীর মান্ডির আশ্বাস, ‘‘তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই আয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’’
কর্তাদের এমন আশ্বাস অবশ্য আগেও বহু বার শোনা গিয়েছে। ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে রোগী বা তাঁদের আত্মীয়দের থেকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ নতুন নয়। সাময়িক ভাবে কড়াকড়ি করা হলে তা কয়েক দিন বন্ধ থাকে। তার পরে ফের যে-কে-সেই। এক রোগীর আত্মীয়ের আক্ষেপ, ‘‘আমার মেয়ের সন্তান হওয়ার পর আয়ারা বললেন, ‘ছেলে হয়েছে, এক হাজার টাকা লাগবে’। মেয়ে জন্মালে দেড়শো-দু’শো টাকায় যদিও বা ছাড় পাওয়া যায়, ছেলে হলে কথাই নেই। শেষে ৫০০ টাকা দিয়ে রেহাই পাই।’’
এক সময়ে আয়ারাজের দৌলতে কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজও। তাতে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে কল্যাণী শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমর রায়কে দল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হয়। এখন প্রায় ২০০ মহিলা ও ৮০ জন পুরুষ আয়া রয়েছেন ওই হাসপাতালে। পুরসভা তাঁদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তার পরেও টাকা নিয়ে জুলুম চলছে বলে অভিযোগ।
জেএনএম হাসপাতাল ও রোগীর পরিজনদের সূত্রে জানা যায়, এক শিফটে আয়ারা রোগী পিছু ১৮০ টাকা করে নেন। এক-এক জন আয়া দৈনিক অন্তত চার-পাঁচ জন রোগীর দায়িত্ব নেন। কোনও রোগী হয়তো আধ ঘণ্টা ভর্তি থাকার পরে তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হল— সে ক্ষেত্রেও পুরো টাকা নেন আয়ারা। কিছু দিন আগে প্রসেনজিৎ দাস নামে এক যুবক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, দিনের বেলায় যাও বা ডাকাডাকি করে পাওয়া যায়, রাতে রোগীর অসুবিধার কথা কানেই তোলেন না আয়ারা। কিছু বলতে গেলেই জোটে দুর্ব্যবহার। প্রসুতিদের কাছ থেকে মোটা টাকা, এমনকী শাড়ি-চুড়িও দাবি করেন অনেকে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও আয়াদের দৌরাত্ম্যে রোগীরা অতিষ্ঠ। সেখানেও সবচেয়ে বড় শিকার প্রসূতি ও তাঁর বাড়ির লোকজন। ডোমকলের ওয়ার্ড গার্ল রুনা লায়লার অভিযোগ, ‘‘ভর্তি থাকা রোগী পিছু কমপক্ষে ২০০ টাকা করে আদায় করছে আয়ারা। দিতে না পারলে অত্যাচার করছে।’’
সব ক’টি হাসপাতালের আয়ারাই অবশ্য দাবি করেছেন, জোরাজুরির কথা সত্যি নয়। ‘খুশি হয়ে’ যে যা দেয়, ওঁরা তা-ই নেন। মুর্শিদাবাদের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি বলেছি, গোটা ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতেও বলেছি সুপারকে।’’