উৎসব শেষ। থেমেছে দোলের পরিক্রমা। কানে আসছে না বসন্ত কীর্তনের সুর। কুঞ্জভঙ্গের বেদনায় বিষণ্ণ চৈতন্যধাম। মঠ-মন্দিরে ভিড় জমানো দেশ-বিদেশের ভক্তদের অধিকাংশই ঘরে ফিরে গিয়েছেন। আড়মোড়া ভেঙ্গে ক্রমশ নিজস্ব ছন্দে ফিরতে চাইছে নবদ্বীপ।
দুয়ারে ভোট। অথচ এখনও পর্যন্ত নবদ্বীপ যেন দোলের ‘হ্যাংওভার’ পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাজনীতির কারবারিরাও সে কথা কবুল করে বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, টানা একটা উৎসবের ধকল গেল। দোলের মরসুমে তেমন কিছুই করা হয়নি। এ বার জোরকদমে কাজ শুরু করতে হবে।’’
তবে দোলের পরে প্রথম রবিবারেও কার্যত প্রচারহীন থাকল নবদ্বীপ। রাজনৈতিক দলের নেতারা দলীয় কর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন ঘরোয়া কর্মসূচিতে। নবদ্বীপের তিন বারের বিধায়ক তথা তৃণমূলের প্রার্থী পুণ্ডরীকাক্ষা সাহা দিনভর ব্যস্ত থাকলেন ঘরোয়া কর্মিসভায়। জোটের প্রার্থী সিপিএমের সুমিত বিশ্বাস সকালের দিকে শহরের দক্ষিণাঞ্চলে কিছুক্ষণ পদযাত্রা করেছেন। পরে কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে প্রচার সেরেছেন। দোল মিটতেই বিজেপি প্রার্থী গৌতম পাল পায়ে হেঁটে নবদ্বীপ শহর চেনার কাজটি শুরু করেছেন।
নবদ্বীপে দেওয়াল লিখন শেষ হয়েছে তৃণমূলের। ফ্লেক্স ও প্রচারের বৈদ্যুতিন বোর্ড বসানোর কাজও শেষ। যদিও নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা ভোটের প্রচারের থেকেও বেশি সময় দিয়েছেন দোল উৎসবে। উৎসব তো মিটল। ভোটের প্রচার নিয়ে নিয়ে কী ভাবছেন? “আমি আর কী ভাবব, ভাববে তো মানুষ।” হাসছেন পুণ্ডরীকাক্ষবাবু। তিনি জানাচ্ছেন, ভোট যত এগিয়ে আসবে প্রচারও সে ভাবে হবে। তবে মঠ-মন্দির প্রধান নবদ্বীপে বিভিন্ন উৎসব যে জনসংযোগের অন্যতম রাস্তা তা বিলক্ষণ জানেন পুণ্ডরীকাক্ষবাবু। দোলের মরসুম জুড়ে তিনি সেই কাজটি যত্ন নিয়েই করেছেন। তবে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা দোল মিটতেই ছোট ছোট দলে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বেরোতে শুরু করছেন। দোল মিটতেই সিপিএমের তরফে দেওয়াল লেখার কাজ চলছে পুরোদমে। পাশাপাশি চলছে সিপিএম-কংগ্রস দু’দলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক। নবদ্বীপের জোট প্রার্থী সিপিএমের সুমিত বিশ্বাস নিয়মিত স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এলাকা ভিত্তিক আলাপচারিতায় বসছেন। দু-দলের কর্মী সমর্থকেরা যৌথ ভাবে প্রচারও করেছেন নবদ্বীপের বাজারে। দোলের এই পর্বে অবশ্য সুমিত বিশ্বাস বাড়ি বাড়ি প্রচারের জোর দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু মানুষকে শুধু ছুটির দিনেই বাড়িতে পাওয়া যায়। দোলের সপ্তাহে অনেকগুলো ছুটি ছিল। কয়েকটি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি।’’
উৎসব প্রধান নবদ্বীপে এ ভাবে দোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের ঠিক পরেই ভোট আগে কোনওদিন হয়নি। তাই উৎসব এবং ভোটের মধ্যে কোনটিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এ নিয়ে সংশয় ছিল সব দলেই। কিন্তু নবদ্বীপের অর্থনীতি এখন যে ভাবে দোলের মতো উৎসবের উপর নির্ভরশীল তাতে করে উৎসবকেই গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কংগ্রেসের নির্মল সাহা যেমন বলছেন, ‘‘আমাদের দলের অনেক কর্মী ছোটখাটো ব্যবসা করেন। কারও কারও দোকানও রয়েছে। নবদ্বীপের দোলের মরসুম তাঁদের কাছে আর্থিক ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। ফলে সেই সময় তাঁদের সময় দেওয়া সম্ভব ছিল না। এখন দোল মিটেছে। সবাইকে নিয়েই প্রচারে নামব।’’
সিপিএমের নবদ্বীপ লোকাল কমিটির (দক্ষিণ) সম্পাদক অজয় সিংহের কথায়, ‘‘দোলের সময় নবদ্বীপ মোটেই ভোটের কথা শুনতে রাজি ছিল না। দোল শেষ। এ বার সকলে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’