রাস উৎসবে এক তিথিতে পূজিত নানা দেবদেবী। —নিজস্ব চিত্র।
নবদ্বীপের রাস উৎসবে এক তিথিতে পূজিত নানা দেবদেবী। এ এক আশ্চর্য মহামিলন বটে। বিশুদ্ধ শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈবমূর্তির সঙ্গেই পূজিত হন মিশ্রধারার প্রতিমা। বিরোধ নয় বরং পঞ্চোপাসক সনাতন ধর্মের সার্বিক সমন্বয়ের উৎসবে পরিণত হয়েছে নবদ্বীপের রাস। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।
মহিষমর্দিনী মাতা
১৯৬২ সালে শুর হয় পুজো। সে কালে গরুর গাড়ি চাকা লাগানো প্রতিমার শোভাযাত্রার বাঁশের গাড়িতে প্রথম কাঠের ‘স্টিয়ারিং’ যোগ করা হয়। যা ‘খ্যাঁচাকল’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬২ সালের আগে পুজো হত এক দিনের। তার পর থেকে তিন দিনের পুজো ২০০৮ সালের পর নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর থেকে পুনরায় শুরু হয়ে পুজো। বর্তমান সদস্যদের ইচ্ছা, আগামী বছর থেকে আবার তিন দিনের পুজোর আয়োজন করার।
নৃত্যকালী মাতা
ব্যাদড়া পাড়ার নৃত্যকালী প্রতিমা পুজো হত নবদ্বীপ দুধ বাজারে। উদ্যোক্তা ছিলেন ঘোষ সম্প্রদায়ের মানুষ। পরে দু’বছর বঙ্গপাড়ায় পুজো হয়েছিল নৃত্যকালীর। তার পর পুজো চলে আসে ব্যাদড়া পাড়ায়। নৃত্যকালীকে ঘিরে শোনা যায় নানা কাহিনী। ২৬ বছর ধরে পুজোর সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সৌমেন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘মাঝে মাঝে চরম সঙ্কট দেখা দেয়। খুব অদ্ভুত ভাবে তার সমাধানও হয়ে যায়। শক্তি পুজো হলেও বলি হয় না। মানত করে ধুনো পোড়ান ভক্তেরা। অন্নভোগ হয়।’’ এ বারের পুজোর বাজেট প্রায় পৌনে তিন লক্ষ টাকা। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এ বারে পুজোর উদ্বোধন করবেন এক জন চাষি।
শ্রীশ্রী চণ্ডীমাতা
রাসে পূজিত অসংখ্য অসুরনাশিনী শক্তিমূর্তির মধ্যে আগমেশ্বরী পাড়ার চণ্ডী মাতা ব্যতিক্রম। একমাত্র ওই প্রতিমার নির্মাণশৈলীতে এখনও ধরা আছে সেকালে বিখ্যাত মৃৎশিল্পী দামু পালের ঘরানা। ১০৯ বছরে পা দেওয়া ওই পুজো প্রসঙ্গে বলছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা সন্তোষ মল্লিক। সে কালে পুজো হত বর্তমান মণ্ডপ থেকে খানিক দূরে। একদা বলি-সহ বিশুদ্ধ তন্ত্রমতে চণ্ডীমাতার পুজো হলেও ২০১৫ সালে শতবর্ষ উদ্যাপনের পর থেকে এখন আর বলি হয় না। পুজোর ভোগ থেকে নৈবেদ্যের বেশির ভাগই আসে ভক্তদের কাছ থেকে। এ বারের বাজেট প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা।