Fisherman

কাজ হারালেন ১৩৪ জন মাঝি

চার দশক আগে ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরির সময় ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফিডার ক্যানাল খনন করেন ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এই ক্যানাল দিয়েই ফরাক্কা থেকে গঙ্গার জল গিয়ে মিশেছে  সুতির আহিরণে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩২
Share:

আন্দোলনে নেমেছেন মাঝিরা। নিজস্ব চিত্র

ফিডার ক্যানালে নৌকো পারাপারে নিযুক্ত ১৩৪ জন মাঝি কাজ হারালেন। গত কয়েকদিন থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে ১০টি ফেরিঘাটে। ফরাক্কা থেকে সুতি পর্যন্ত ওই ১০টি ফেরিঘাটে দীর্ঘ দিন ধরে ২৩৮ জন মাঝি কাজ করেন। হাল ও দাঁড়ের সাহায্যে এতদিন সেগুলিতে চালু ছিল হস্তচালিত নৌকো। এখন সেগুলিতে যন্ত্রচালিত নৌকো দিয়ে পারাপার শুরু করতে চাইছে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। ফলে নৌকোর সংখ্যা কমেছে, ছাঁটাইয়ের কবলে পড়েছেন মাঝিরাও।

Advertisement

চার দশক আগে ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরির সময় ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফিডার ক্যানাল খনন করেন ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এই ক্যানাল দিয়েই ফরাক্কা থেকে গঙ্গার জল গিয়ে মিশেছে সুতির আহিরণে।

এই ক্যানালের দুই পাড়ে প্রায় শো দেড়েক গ্রাম রয়েছে। যোগাযোগ ব্যাহত হবে বলে ক্যানাল কাটা নিয়ে তাঁরা আপত্তি তুললে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ তখন আশ্বাস দেন এলাকার মানুষজনের যাতায়াতের জন্য ১০টি জায়গায় ফিডার ক্যানালের উপর সেতু গড়ে দেবেন তারা। যতদিন সেতু গড়া না হয় ততদিন বিনা খরচায় যাত্রীদের নদী পারাপারের জন্য ফেরিঘাট চালাবে ফরাক্কা ব্যারাজ। চার দশক পেরিয়েও সেতু হয়নি কোথাওই। ফলে ফেরিঘাটই ভরসা এলাকার গ্রামবাসীদের।

Advertisement

এই চুক্তি মেনেই সুতি থেকে ফরাক্কার ঘোড়াইপাড়া, নিশিন্দ্রা, মালঞ্চা, শঙ্করপুর, বল্লালপুর, আমুহা, বালিয়াঘাটি, বামুহা সহ এলাকায় ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ ১০টি ফেরিঘাট সার্ভিস চালু রেখেছেন আজও। ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে সরকারি শর্ত মেনে প্রতি বছর ফেরিঘাটগুলিতে নিঃখরচায় পারাপারের জন্য নিলাম ডাক করা হয়। ২৩৮ জন মাঝি রয়েছেন ওই দশ ফেরিঘাটে। মাঝিদের কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যূনতম হারে মজুরি, ছুটির দরুণ বাড়তি, বছরে ৮.৩৩ হারে বোনাস সহ যাবতীয় খরচ বাবদ ওই ১০টি ঘাট চালাতে বছরে ঠিকাদারদের প্রায় ৬ কোটি টাকা মেটায় ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।

প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক যাত্রী পারাপার করেন মালঞ্চা, বালিয়াঘাটি, আমুহায়। তিনটি ঘাটেই ৩৪ জন করে মাঝি রয়েছে। শঙ্করপুর ঘাটে ২৮ জন, ঘোড়াইপাড়া ও নিশিন্দ্রায় ২২ জন ,বল্লালপুরে ২৬ জন। কিন্তু যন্ত্রচালিত নৌকো চালু হওয়ার ফলে মাঝির সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় ১৩৪ জনকে ঠিকাদারেরা তাঁদের কাজ থেকে ছাঁটাইয়ের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সেই থেকে বিভিন ঘাটে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে মাঝিদের। কয়েকটি ঘাটে মাঝিদের বাধায় যন্ত্রচালিত নৌকো এখনও নামানো যায়নি।

আমুহা ফেরিঘাটের ঠিকাদার সুনীল চৌধুরী বলছেন, “এতদিন ৬টি নৌকো চলত ঘাটে। মাঝি ছিলেন ৩৪ জন। এখন যন্ত্রচালিত নৌকো চালুর ফলে নৌকো চলবে দুটি। মাঝির সংখ্যা ১০ জনে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। সেই মত অর্থ বরাদ্দ কমানো হয়েছে। তাই ছাঁটাই করে তাদের পিএফের প্রাপ্য টাকা অনলাইনে মাঝিদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তবে মাঝিদের এই বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছে সব কটি রাজনৈতিক দল। মাঝিদের সিটু নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের সভাপতি আবুল হাসনাত খান বলেন, “এই ছাঁটাই নিয়ম বিরুদ্ধ। আমরা সর্বত্র এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। সব কিছুর একটি নিয়ম রয়েছে। তাই মাঝিরা তার প্রতিবাদ করছেন।”

তৃণমূলের মাঝি সংগঠনের নেতা সুরেন ঘোষের কথা, “ছাঁটাই মাঝিরা ৩০/৪০ বছর ধরে কাজ করছেন ওই সব ফেরিঘাটে। ছাঁটাই করলে যে সব সুযোগ সুবিধা তাদের প্রাপ্য তাও মানা হয়নি।” বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হেমন্ত ঘোষ বলছেন, “ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী এসেছিলেন ফরাক্কায়। তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত অমানবিক। কাজ হারিয়ে তারা যাবেন কোথায়? এ ব্যাপারে ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে সোমবারই মাঝিদের নিয়ে দেখা করব।” ফরাক্কার কংগ্রেসের বিধায়ক মইনুল হক বলছেন, “এ ভাবে কাজে ছাঁটাই মানা যায় না।”

তবে ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজার শৈবাল ঘোষ জানান, এ ব্যাপারে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের কোনও দায় নেই ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement