নয়ন আনসারি ও রিজওয়ান আনসারি।
ভৈরব নদের উপরে বাঁশের সাঁকো। তার উপর থেকে জলে ঝাঁপ দিচ্ছে এক কিশোর, আর অন্য এক জন মোবাইলে সেই ছবি তুলছে। সেই ছবি তোলার নেশাতেই ডুবে মৃত্যু হল দুই কিশোরের। তাদের নাম নয়ন আনসারি (১৬) ও রিজওয়ান আনসারি (১৬)। বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে ডোমকল ও হরিহরপাড়া সীমান্তে অবস্থিত ভৈরব নদের সুন্দলপুর-ফতেপুর ফেরিঘাটে। নয়ন ও রিজওয়ানের বাড়ি ডোমকল থানার এতবারনগর ও বাবলাবোনা এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক দল কিশোর ডোমকল থেকে প্রায় ১০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে সুন্দলপুর-ফতেপুর ফেরিঘাটে মাঝেমাঝেই স্নান করতে যায়। স্নানের সময় নানা রকমের ফটোশুটও করে তারা। এদিন একই ভাবে বাঁশের তৈরি সাঁকো থেকে ঝাঁপিয়ে কোমর জলে স্নান করতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন যেখানে ঝাঁপ দিয়েছিল সেখানে কোমর জল থাকলেও কিছুটা দূরে গর্ত থাকায় স্রোতের টানে সেই এলাকায় পৌঁছে ডুবে যায় ওই দু’জন।
নয়ন, রিজওয়ানদের সঙ্গে ছিল আবু সাইদ ও সেলিম আনসারি নামে আরও দুই কিশোর। সকলেই ডোমকল বাজার এলাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে কেউ বাবার ব্যবসায় হাত লাগিয়েছে, কেউ আবার অন্যের দোকানেও কাজ করে। বুধবার ডোমকল বাজার বন্ধ থাকায় বুধবার করেই তারা দুপুরবেলা ওইখানে গিয়ে স্নান করে। এই তরুণদের আত্মীয়দের দাবি, বাড়ি থেকে প্রায় দশটা নাগাদ বেরিয়েছিল ওরা। বারণ করা সত্ত্বেও শোনেনি।
সঙ্গে থাকা বন্ধুদের দাবি, বাঁশের সাঁকো থেকে জলে ঝাঁপ দিচ্ছিল রিজওয়ান, আর মোবাইলে তা ফটোশুট করছিল নয়ন। জানা গিয়েছে, সাঁতার না জানা রিজওয়ান জল থেকে না ওঠায় তাকে উদ্ধার করতে নেমে পড়ে কিছুটা সাঁতার জানা নয়ন। কিন্তু নয়নও আর জল থেকে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গী বন্ধু আবু ও সেলিম কান্নাকাটি শুরু করলে পাড়ে থাকা কৌশিক মাঝি ও প্রদীপ মাঝি ঝাঁপিয়ে পড়েন তাদের উদ্ধার করতে। কিন্তু ঘটনাস্থলে তাদের সন্ধান মেলেনি। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে উদ্ধার হয় তাদের দেহ।
ঘটনার খবর পেয়ে ডোমকল এবং হরিহরপাড়ার পুলিশ প্রশাসন ছুটে যায় সেখানে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ডোমকলের বিধায়ক তৃণমূলের জাফিকুল ইসলাম। জাফিকুলের দাবি, ‘‘সাঁতার না জানার ফলেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। অভিভাবকদের কাছে আবেদন রাখব সন্তানদের নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার জন্য। আমরা দুটি পরিবারের পাশে আছি।’’ তবে দ্রুত প্রশাসন ছুটে এলেও নয়নের মামা সমিরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে ছুটে যাই সেখানে। দেখি ভাগ্নেকে জল থেকে তুলে স্থানীয় কয়েক জন চেষ্টা করছে শুশ্রূষা করার। আমি বাইকে থাকায় ভাগ্নেকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারছিলাম না। ওই ঘাট পেরিয়ে বেশ কয়েকটি পুলিশ লেখা গাড়ি ডোমকলের দিকে এলেও শত অনুরোধ করে হাত তুললেও দাঁড়ায়নি। তাঁরা একটু দয়া করলে হয়ত দ্রুত হাসপাতালে আনতে পারতাম নয়নকে।’’
নয়ন এ বছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে, অন্যদিকে রিজওয়ানের লেখাপড়ায় ছেদ পড়েছে অনেক আগেই। বাবার দোকানে সহযোগিতা করে সে। আর বুধবার দোকান বন্ধ থাকায় ভৈরবে স্নান করতে যায় বন্ধুরা মিলে। এ দিন তাদের সঙ্গে থাকা আবু ও সেলিমের দাবি, ‘‘আমরা মাঝে মাঝেই ডোমকল থেকে এই ঘাটে স্নান করতে আসি। এ দিনও স্নান করছিলাম। কিন্তু কোমর জলে ঝাঁপ দিয়ে কেমন করে এমন ঘটনা ঘটল আমরাও বুঝতে পারছি না।’’ সামান্য জলে এই ঘটনা ঘটায় হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারাও। যদিও স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ মাঝি বলছেন, ‘‘ভৈরবে মাঝে মাঝে কিছু জায়গা আছে যেখানে বালি কেটে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়। ফলে সব জায়গায় সমান জল থাকে না। সেই রকমেরই কোনও গর্তে পড়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।